ভারতের বাঙ্গালি তনয়ার অসাধ্য সাধন। কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয় করেছেন হুগলির বাসিন্দা পিয়ালি বসাক। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এভারেস্ট জয় করলেন তিনি।
আর রোববার (২২ মে) সকালে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান তিনি। সেই খবর আসতেই উচ্ছ্বসিত অন্যান্য পর্বতারোহীরা। আপাতত শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন তিনি।
দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া গত অক্টোবরে ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয় করেছিলেন পিয়ালি। তার ঠিক সাত মাসের মধ্যে আবারও অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী হলেন তিনি। চন্দননগরের মেয়ে অনেক বাধা পেরিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।
চন্দননগরের কাঁটাপুকুরের বাসিন্দা পিয়ালি৷ বারবারই তাঁর চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। তা সত্ত্বেও এতটুকু দমেননি। আর্থিক সংকটকে তুচ্ছ প্রমাণ করে চলতি মাসেই এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ১-এর উদ্দেশে রওনা দেন পিয়ালি।
আর সবারমতো চেনা স্রোতে গা ভাসাননি পিয়ালি। অঙ্ক নিয়ে স্নাতক শেষে তিনি দেখেন বন্ধুবান্ধবরা জীবিকার জন্যে ইঁদুরদৌড়ে শামিল হয়েছেন। কিন্তু সেই দৌড়ে শামিল হতে মন সায় দেয়নি পিয়ালির। কারণ, ততক্ষণে তার মনের দখল নিয়েছে পাহাড়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’-এ নাম লেখান পিয়ালি। এরপর আর ফিরেও তাকাননি।
২০১৮ সালে মানাসলু শৃঙ্গে পা রেখে ইতিহাস গড়েছিলেন পিয়ালি। মানাসলু বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। তারপর স্কুলশিক্ষিকা পিয়ালির লক্ষ্য ছিল সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গজয়। প্রথম কোনও ভারতীয় পর্বতারোহী অক্সিজেন ছাড়া নেপালের আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ৮১৬৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট ধৌলাগিরি জয় করেন পিয়ালি। এবার অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়। এ নিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় দ্বিতীয়বার পা রাখলেন বাংলার মেয়ে।
দীর্ঘদিন ধরেই এভারেস্টের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পিয়ালি। তবে তার যাত্রার পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ। বাড়ি বন্ধক রেখে এবং নিজের যাবতীয় সঞ্চয় একত্র করেও ১৮ লাখ রুপি বেশি হচ্ছিল না। এ দিকে, এভারেস্ট অভিযানের জন্য দরকার ছিল ৩৫ লাখ রুপি। নেপাল সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, পুরো টাকা না পেলে এভারেস্ট অভিযান করতে দেবে না তারা। এই অবস্থায় ফেসবুকে পোস্ট করে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থের আবেদন করেন পিয়ালি। সেখান থেকে আরও পাঁচ লাখ রুপির মতো ওঠে। তখনও দরকার ছিল ১২ লাখ রুপি। এমন সময় পিয়ালির সাহায্যে এগিয়ে আসে তার এজেন্সি। তারাই আপাতত বাকি টা দিয়ে দেবে বলে জানায়। ফলে শেষ মুহূর্তে এভারেস্টে ওঠার অনুমতি পান পিয়ালি।