বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাসফ ও বারসিকসহ ১৪ সংগঠনের উদ্যোগে শনিবার ঢাকায় আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও, খাদ্যের নিরাপদ মান উন্নয়নে কার্যক্রম ও অগ্রগতি কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকে অর্গানিক (জৈব)কৃষি উৎপাদন করলেও, ভোক্তারা অনিশ্চয়তায় ভোগেন। এতে অর্গানিক কৃষিজাত পন্যের চাহিদা থাকা সত্বেও জৈব কৃষির উৎপাদন ও বাজার আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
বক্তারা জনস্বাস্থ্য ও রপ্তানী বৃদ্ধির স্বার্থে এবং অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত নিয়ন্ত্রণ করতে সকল খাদ্য ও পানীয় নিয়মিত পরীক্ষা ও এর ফল জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানান।
জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জনস্বাস্থ্য ও রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত কর’ দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)’র সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না’র সভাপতিত্বে ও পবা’র সম্পাদক এমএ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহান, নাসফ সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী, বারসিক সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম, বানিপা’র সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রে’র মহাসচিব মাহাবুল হক, বিডিক্লিক’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, সামাজিক আন্দোলন সংস্থার চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির হিরু, বাংলাদেশ ট্যুরিষ্ট সাইক্লিং’র সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, গ্রিণফোর্স’র আহসান হাবিব, বাংলাদেশ যুব সমিতি’র সভাপতি আক্তার হোসেন, বাংলাদেশ বাস্তুহারা লীগ সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাওলাদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে মারা যায় ৯১,৩০০ জন। কিডনি জটিলতায় দেশে ২০১৯ সালে যত মানুষ মারা গেছেন, তার প্রায় তিনগুণ মানুষ মারা গেছেন ২০২০ সালে। ২০২০ সালে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮,০১৭ জন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২.৭৭ লাখ মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। বিশেজ্ঞরা মনে করেন, এধরনের রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্য ও পানীয়তে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি।
তারা বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও দুর্যোগপূর্ণ দেশ হলেও বিশ্বের বাঘা দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বর্তমানে ধান, মাছ ও সবজি ইত্যাদি উৎপাদনে বিশ্বের প্রখম সারির দেশগুলোর কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রচলিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ভিত্তিক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার দাপটে কৃষিজাত পন্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও জৈব কৃষির উৎপাদন ও বাজার আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফসলে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এবং মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারে খাদ্য দূষিত হচ্ছে।
একইসাথে মজুতদার, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক তথা ফরমালিন, ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, ইথোফেন, কীটনাশক, কাপড়ের রং, পোড়া তেল ও মবিল মিশ্রিত তেলসহ নানা রকম ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপকরণ, হরমোন এবং এন্টিবায়োটিক খাদ্যে মিশানো হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যেও নানা ধরণের বিষাক্ত রাসায়নিক মিশানো হচ্ছে। এর ফলে প্রায় সকল খাদ্য ও পানীয়তে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে বলেন বক্তারা।
মানববন্ধনে জনস্বাস্থ্য এবং রপ্তানী বৃদ্ধির স্বার্থে নয় দফা সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।