ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিজয় যাতে নষ্ট না হয় সেজন্যে দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোতে ভবিষ্যতে যেন আর কোনো বিদ্রোহের মুখে না পড়তে হয়, সেজন্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় বুধবার এক জনসভায় যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। গণতন্ত্র রক্ষায় মানুষের হারানো ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসময় নতুন বাংলাদেশ গড়তে কোন অন্যায়ের সাথে দলীয় নেতাকর্র্মীরা যাতে জড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে সচেতন থাকার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগ আয়নাঘর বানিয়েছিল। এই ভয়াবহ দানব ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার দুই হাজার মানুষকে খুন করেছে। গুলিতে কারও হাত চলে গেছে, কারও পা চলে গেছে, কারও মাথার খুলি উড়ে গেছে। আজকে মুক্ত বাতাসে আমরা বাস করছি। কিন্তু মনে রাখবেন, সেই পর্যন্তই মুক্ত থাকবে, যত দিন আমরা স্বাধীন রাখতে পারব। আমরা যদি আওয়ামী লীগের মতো শুরু করি, তাহলে কি আমরা থাকতে পারব। আমাদেরও একই রকম দশা হবে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের কাছে অনুরোধ, আপনার নিজেদের মানুষের কাছে নিজেকে প্রিয় বানান। কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন করবেন না।’
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের আমাকে বিদ্রূপ করে বলতেন, “আমরা তো পালাব না। যদি পালাতেই হয়, তবে দেশের বাইরে যাব না।” আমার নাম ধরে বলতেন, “ফখরুল আপনি কি আপনার বাসায় আমাকে জায়গা দেবেন না?” এখন তাঁকে (ওবায়দুল কাদের) বলতে চাই, আপনি আসেন, আমার বাসাতেই এসে ওঠেন।’
সনাতন ধর্মের মানুষজন সংখ্যাগুরুদের আমানত—মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা বিরাট অংশ আছেন সনাতন ধর্মের মানুষ। তাঁরা আমাদের আমানত। তাঁদের রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের। এই আমানত আমাদের রক্ষা করতে হবে। সামনে পূজা আসছে। পূজায় যেন অঘটন না ঘটে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার বলছে, কিছু কিছু জিনিস আওয়ামী লীগ সরকার খুবই খারাপ করে দিয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি হলো ভোটের ব্যবস্থা। এটা ঠিক করা দরকার। সবাই যাতে ভোট দিতে পারে। যার ভোট সেই দেবে, যাকে খুশি তাঁকে দেবে, এমন একটা ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিনিধি নির্বাচন করব। এই সময়টুকু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিতে হবে। তাঁরা সবাই নিরপেক্ষ মানুষ, কোনো দল করেন না। কিন্তু দেশকে ভালোবাসেন। তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। আমাদের উচিত হবে তাঁদের সহযোগিতা করা।’
ভারত সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের পাশেই ভারত। ওরা অনেক খারাপ কাজ করে। সীমান্তে আমাদের লোকজনকে গুলি করে মেরে দেয়। আমরা তাঁদের সঙ্গে ভালোভাবে প্রতিবেশীর মতো থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের ওপর যদি অন্যায়-অত্যাচার হয়, তার প্রতিবাদ আমরা জানাব।’
জনসভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি নুর করিম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, আবু তাহের দুলাল, হরিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরসহ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।