জীবনের প্রথম চুম্বন, যৌনানুভূতির স্বাদ নিয়ে মনে মনে অনেক কল্পনা ছিল অষ্টাদশী স্যাক্সন মুলিনসের। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বদলে দিল তার জীবন। ২০১৩ সাল। সিডনির একটি পানশালার বাইরে সদ্য পরিচিত এক যুবক মুলিনসের সঙ্গে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হন। মুলিনসের দাবি, তিনি বার বার ‘না’ বলেছিলেন। তার আপত্তি কানে তোলেননি সেই যুবক।
ধর্ষণের অভিযোগে ঐ যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। কিন্তু ঐ যৌনমিলনে মুলিনসের সম্মতি ছিল কি না, তা প্রমাণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এখন তার বয়স ২৭ বছর। সেদিনের ওই অষ্টাদশীর লড়াইয়ের কারণেই সদ্য আইনি সংস্কারের পথে হেঁটেছে অস্ট্রেলিয়া। নিউ সাউথ ওয়েলস্ প্রদেশে ধর্ষণ সংক্রান্ত নতুন এই আইনের নাম ‘অ্যাফার্মেটিভ কনসেন্ট’। যে আইনে বলা হয়েছে, যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগমুহূর্তে দু’জনকেই সম্মতি দিতে হবে। তা বার্তালাপের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনও ভাবে হতে পারে। কিন্তু সম্মতি জরুরি।
এই গোটা আইন সংশোধনের মূলে রয়েছে মুলিনসের অদম্য লড়াই। আইনের দরজায় কড়া নেড়ে জীবনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন। পাঁচ বছর আগে হতাশ হয়েছিলেন আদালতের রায়ে। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি মুলিনস। অবশেষে আইন সংস্কারের ফলে মুলিনসের সেই ধর্ষক জেলে গেছেন। মুলিনসের কাছে প্রথম পাঁচ বছরের আইনি লড়াই ছিল যুদ্ধের মতো। প্রথম বার জুরির সামনে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের সামনে সেদিনকার ঘটনার কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওকে ‘না’ বলার পর ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। জোর খাটায়। আমি বলি, বন্ধু নাইট ক্লাবে অপেক্ষা করছে। ছেড়ে দাও। ও ছাড়েনি…’’। অভিযুক্তকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারকরা। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হলেন না মুলিনস। মুলিনস চাইলেন আইনের সংস্কার। যেখানে দু’জন মানুষ তাদের একান্ত মুহূর্ত কাটানোর আগে পরস্পরের সম্মতি নেবেন। এভাবে এক একজনকে শাস্তি দিয়ে কি কোনও বদল আসে না। মুলিনসের আবেদনে দ্বিতীয় বার বিচার শুরু হল। এবার ঐ যুবককে বেকসুর খালাস দিলেন বিচারক। যে মানুষটির জন্য তার জীবন তছনছ গেছে, দেখলেন তিন হাত দূরে দাঁড়িয়ে তিনি হাসছেন। এ কেমন বিচার হল!
২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের এক অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য, অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মুলিনস। এরপর এ নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়। মুলিনসের লড়াই কঠিন ছিল। কারণ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান এবং নিউ ইয়র্কের মতো দেশের ও বিভিন্ন প্রদেশের আইনে ধর্ষণ মানে শুধু যৌন হেনস্থা নয়। যৌনতার চরিত্র হিংসাত্মক হলেই তবে তাকে ধর্ষণের আওতায় ফেলা হয়। সম্প্রতি মুলিনসের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আইনে বদল এসেছে। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তার তো কোনও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আমার লড়াইয়ের ফলে যদি আর কারও সঙ্গে এমন না ঘটে, সেটাই হবে আমার জয়।’
যদিও নতুন আইন নিয়ে সমালোচকদের একাংশ বলছেন, সংশোধিত আইনের সুবিধা নিয়ে প্রাক্তন প্রেমিককে ফাঁসাতে পারেন অনেকে। ঐ মুহূর্তে সম্মতি ছিল কি ছিল না, সব সময় তা প্রমাণ করাও তো অসম্ভব। তবে অদম্য স্যাক্সন মুলিনসের লড়াইয়ের প্রশংসা করছেন অগণিত মানুষ। যার একার লড়াইয়ে বদলে গেলো অস্ট্রেলিয়ার ধর্ষণ আইন। সূত্র: বিবিসি