বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। দল নির্দেশ দিলেই আমাদের এমপিরা পদত্যাগ করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তারপর নির্বাচন।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রংপুরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমাদের যত অর্জন ছিল, যত স্বপ্ন ছিল, সব ধ্বংস করা হয়েছে। এখন কঠিন দুঃসময়। দেশে দুর্ভিক্ষ হলে মানুষ কোথায় যাবে? দেশে দুর্ভিক্ষ হলে সব দায় শেখ হাসিনার।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নাকি বিরোধীদল ও জনগণকে ভয় পায় না। ভয় যদি না পাও তাহলে কেন দুই দিন ধরে পরিবহণ বন্ধ করে দাও। কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মার?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি নাকি চিবিয়ে খাই। আরে আপনারা তো চিবিয়ে চিবিয়ে অর্থনীতিটা খেয়ে ফেলেছেন। এখন দেশটা খেয়ে ফেলবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প করে একটা ঘর দেয়, ওখানেও চুরি করে। আমাদের এই সরকার সর্বভোগে পরিণত হয়েছে। সব খেয়ে ফেলতে চায়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয় না। আমাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা। ৩৫ লাখ মামলা। ৬০০ নেতাকর্মী গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষ হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায়? এখন বলে কিনা দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। এ দায় কার? ১৯৭৫ সালে তার বাবার আমলেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। এই রংপুরের বাসন্তি লজ্জা নিবারণের জন্য এক টুকরো কাপড় পায়নি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা তো চিতল মাছ খাচ্ছেন। আমরা সাধারণ মানুষ না খেয়ে আছি। আপনারা কি এটা মানবেন? আমেরিকার একটা রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সরকার মিথ্যা কথা বলে। রংপুরে মানুষ জেগে উঠবে, এই ভয়াবহ সরকারের পতন ঘটাবে। আপনাদের নুরুলদিন বলেছিলেন, কোনঠে বাহে জেগে ওঠো। আজকে আমাদের জেগে উঠতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কেমন আছেন বাহে, আমরা রংপুরের সাওয়াল। আমরা ভালো নাই। আমরা সকল নির্যাতন অত্যাচার জয় করে আমরা ভালো থাকব। আজকে সমাবেশে প্রতিবাদ করতে এসে একজন নিহত হয়েছেন। আমি তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
রংপুর নগর বিএনপির আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন আর রশিদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুনায়েম মুন্না, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ওলামা দলের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহ মো. নেছারুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।
এ ছাড়া জাতীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ওলামা দল কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহ মো. নেছারুল হক, রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, দিনাজপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের শুরুতেই স্থানীয় বিএনপি এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা বিএনপির শীর্ষনেতারা বক্তব্য দেন।
এর আগে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ মাঠে জড়ো হতে থাকেন বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা।