টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে অনলাইন-অফলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সংগ্রহে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যবস্থায় বিদেশি নাগরিকদের ট্রেনে ভ্রমণে পাসপোর্ট দেখিয়ে টিকিট নিতে হবে।
রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের মাধ্যমে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে। রেলের কর্মকর্তারা পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনের মাধ্যমে টিকিট যাচাই করবেন। কেউ অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কেটে ভ্রমণ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যবস্থাকে ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ বলছে রেলওয়ে। টিকিট কালোবাজারি বন্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সরকারি উদ্যোগের অংশ এটি।
বুধবার (১ মার্চ) থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে। সকাল সাড়ে আটটায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম।
তবে এর মাধ্যমে অনেক যাত্রীই ট্রেনে চড়তে পারবেন না বলে আশঙ্কা করছেন রেলেরই কোনো কোনো কর্মকর্তা। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের হয়রানি ও কষ্ট বাড়বে। কারণ, এই ব্যবস্থায় টিকিট কাটতে হলে ১২ বছরের বেশি বয়সী দেশের জনসংখ্যার সবাইকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর ওয়েবসাইট থেকে টিকিট কাটতে হলে অন্তত একটি ই-মেইল আইডি লাগবে। কারণ, ই-মেইল আইডি দিয়ে সাইন আপ ছাড়া নিবন্ধন কিংবা টিকিট কাটা যাবে না। আর যারা কাউন্টার থেকে টিকিট কাটবেন, তাদেরও আগে থেকে নিবন্ধন থাকতে হবে। এই বিবেচনায় দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠী টিকিট কাটার সুযোগই পাবে না।
এদিকে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ার খবরে অনলাইন ও কাউন্টারে রেলের অগ্রিম টিকিট নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আগামী কয়েক দিনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া আগামী শনিবার পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট গতকাল বিক্রি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত যেসব যাত্রী টিকিট নিয়েছেন, তাদের ওপর আগামী চার দিনের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব নয়। নতুন ব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর হতে শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
নতুন নিয়মে যেভাবে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে
নতুন নিয়মে শুধু অনলাইন নয়, কাউন্টার থেকেও ট্রেনের টিকিট কিনতে নিবন্ধন করতে হবে। খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। কাউন্টার, অনলাইন ও অ্যাপের মাধ্যমে তা করা যাবে। ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা যাত্রীরা সাধারণত মোবাইল ফোন থেকে এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আগে থেকে যাদের রেলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করা আছে তাদের সাইন-ইন করে জন্ম নিবন্ধন সদন আপলোড করতে হবে। আর যাদের আগে থেকে নিবন্ধন নেই, একেবারেই নতুন-তাদের প্রথমে ওয়েবসাইট ভিজিট করে সাইন আপ করে জাতীয় পরিচয়পত্র আপলোডের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
পুরনো নিবন্ধনকারীদের ক্ষেত্রে
ধাপ-১: বর্তমান username এবং Password দিয়ে https://etiket,railway.gov.bd-এ প্রবেশ করে BR <space> NID নম্বর space ticket.railway.gov.bd তে অথবা rail sheba app এ সাইন-ইন করতে হবে।
ধাপ-২: NID নম্বর এবং জন্ম তারিখ লিখে verify বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর NID নম্বর জন্ম তারিখ সঠিকভাবে প্রবেশ করালে যদি NID নম্বরটি পূর্বে ব্যবহার করা না হয়ে থাকে তাহলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
নতুন নিবন্ধনকারীদের ক্ষেত্রে
https://eticket.railway.gov.bd ওয়েবসাইট অথবা rail sheba app এ সাইন আপ করতে হবে এবং সঠিক NID নম্বর জন্ম তারিখ verify পূর্বক অন্যান্য তথ্য দিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
অফলাইন নিবন্ধন
মোবাইল থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে BR <space> NID নম্বর <space> জন্ম তারিখ (সাল-মাস-দিন) লিখে পাঠাতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে রেলওয়ে জানাবে নিবন্ধন সফল হয়েছে কি না। সফল হলে অ্যাকাউন্ট নম্বর জানাবে। এরপর ওই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এনআইডি দেখিয়ে স্টেশনে কাউন্টার থেকে টিকিট কেনা যাবে।
বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট দিয়ে অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন। একটি এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধনের বিপরীতে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। একটি নম্বর দিয়ে প্রতিদিন একবারই টিকিট কাটা যাবে। এছাড়া ভ্রমণের সময় যাত্রীকে এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ছবি সম্বলিত নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। আরও দরকার হবে তাদের ই-মেইল নম্বর। থাকতে হবে ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা ও স্মার্টফোন পরিচালনার জ্ঞান।