সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
প্লট গ্রহণে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে তিন মামলা ডলারের বিপরীতে সর্বকালের সর্বনিম্ন রুপির দাম দ্রুত নির্বাচন না দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন: কর্নেল অলি যে জমি পছন্দ হতো, শেখ হাসিনা তা নিজের করে নিত: রিজভী নিজে নিজে হাঁটতে পারছেন খালেদা জিয়া বিশ্ববাজারে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম যেভাবে শপথ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্থাপনের ২০ বছরেও চালু হয়নি বিরল স্থলবন্দর গ্রিনল্যান্ড কিনতে কত লাগবে? চলছে বিশ্বজুড়ে আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে কানাডা, সহায়তার ঘোষণা চীনের যুদ্ধবিরতির পরও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িতে ফিরতে পারছে না লেবানিজরা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আম্পায়ারিংয়ে বাংলাদেশের জেসি মাদ্রিদকে ৪-এর পর এবার ৫ গোলে ভাসাল বার্সা তারা শক্তেরই যম, নরমে তাদের শরম

আমন মৌসুমের শুরুতে ধানের দামে খুশি কৃষকরা

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : নভেম্বর ৩, ২০২১

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: সবুজ মাঠ এখন পাকা ধানে ভরপুর। কৃষকের মাঠে এখন সোনা রঙা ধানের ছড়াছড়ি। আমন ধানের সোঁদা গন্ধে ভরে উঠেছে আবহমান বাংলা। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার মহোৎসব। কৃষকের আঙিনায় গড়াগড়ি খাচ্ছে নতুন ধান। দম ফেলার ফুরসত নেই কৃষকের। কেউ কাটছেন, কেউবা আঁটি বাঁধছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে নতুন ধানের দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। মহাব্যস্ততায় দিন কাটছে তাদের। একদিকে ধান কাটা হচ্ছে, অপর দিকে সেই ধান মাড়াই করা হচ্ছে। সড়কে ধান মাড়াই ও শুকানো হচ্ছে। গ্রামের পাকা সড়কগুলো হয়ে উঠেছে ধান মাড়াইয়ের উঠান।

আমন ধান কাটা নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও নেত্রকোনা অঞ্চলে। বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে।

শুক্রবার নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শিবগঞ্জ ধানের হাটে ভেজা পাইজাম ধান ১১শ’ ৫০ থেকে ১১শ’ ৮০ টাকা মণে বিক্রি হয়েছে। শনিবার দুর্গাপুর হাটেও একই দামে ধান বিক্রি হয়েছে।

ময়মনসিংহের আশুগঞ্জ ধানের পাইকারি বাজারে কিছুটা শুকনা চিকন ধান ১২শ’ টাকা মণে কেনাবেচা হয়। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর বাজারে আগাম জাতের ধান ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতেই ধানের ভালো দামে মহাখুশি কৃষক। আমন ধান মূলত বৃষ্টিনির্ভর। এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে।

আশানুরূপ ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। হাটে ধানের দাম ভালো থাকায় উৎসাহ আর উদ্দীপনায় চলছে কৃষকের কাস্তে। হিসাব কষে এবার লাভের কথাই বলছেন তারা। দেশে উৎপাদিত ধানের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে আমন ধান থেকে। বাকি ৬০ শতাংশ মেটায় বোরো ও আউশ। ধানের এমন উৎপাদনে গ্রামে গ্রামে নবান্নের আনন্দ বইছে। নতুন ধান ঘরে তুলতে কৃষক-কৃষানির দম ফেলার সময় নেই। কৃষি-শ্রমিকদেরও পোয়াবারো অবস্থা। কৃষিভিত্তিক শ্রমের বাজারেও চাঙ্গাভাব চলছে। এক হাজার টাকার নিচে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। ধান বেচে কেউ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীর জন্য নতুন কাপড় কিনছেন।

নেত্রকোনার সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে ধান বিক্রি করে শীতের কাপড় ও ইলিশ মাছ নিয়ে কৃষকদের বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। সীমান্তের বারমারি গ্রামের কৃষক সুরেন হাজং বলেন, ‘পাহাড় থেকে হাতি নামার আগেই ধান কেটে বিক্রি করে দিচ্ছি। এবার পুরো মৌসুমে বৃষ্টি ছিল, এখন ধান কাটার সময় রোদ পাইছি। সড়কের পূজা ঘরের সামনে ধান মাড়াই করছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশেই মৌসুমের শুরুতেই ভেজা পাইজাম, সরসরিয়া, দীঘা, আজলদীঘা, লাউল, কাশো ধান ১১শ’ ৫০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে।

শেরপুর, বগুড়া, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে আগাম জাতের গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি হচ্ছে ১১শ’ ৫০ টাকা মণে। কয়েক বছর ধানের দাম নিয়ে তিনি হতাশ হলেও এবার ধানের দামে কৃষকরা দারুণ খুশি।

উত্তরের চার জেলা বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে এবার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক। গত বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের শুরুতেই মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, এবার চালের বাজার চড়া থাকায় ধানের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ফলনও ভালো হওয়ায় গেল বছরের মতো এবার লোকসানের আশঙ্কা নেই।

বগুড়ার নন্দীগামের কৃষক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার ১০ বিঘা জমিতে ‘কাটারিভোগ’ ধানের আবাদ করেছিলাম। প্রতি বিঘায় গড়ে ২০ মণ করে ফলন পেয়েছি। আর প্রতিমণের দামও ১২শ’ টাকা। পুরো ধান কাটা শেষ হলে দাম কিছুটা কমে যেতে পারে, তাই আগেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছি।’

ময়মনসিংহের ফুলপুরের কৃষক আসাদুলস্না জানান, এবার ‘বিনা-৭’, ‘বি আর-৪৯’, ‘রনজিত’, ‘স্বর্ণা’ ‘পাইজাম’ ও ‘কাটারিভোগ’ ধানই আগেভাগে পেকেছে। আর ‘ব্রি-৩৩’, ‘ব্রি-৩৯’, ‘ব্রি-৫৬’সহ মোটা জাতের ধানগুলো পাকতে আরও সপ্তাহ খানেক লাগবে।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার কৃষক হাকিম আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করতে অঞ্চল ভেদে ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন ধানের যে দাম যাচ্ছে তাতে সব খরচ বাদ দিয়েও একজন কৃষকের ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শ্রীপুর গ্রামের ধনাঢ্য কৃষক আবু সামা জানান, ‘শনিবার ঝাঞ্জাইল হাটে লাল পাইজাম ধান বিক্রি করেছেন ১১শ’ ৫০ টাকা মণে। ধানের দামে তিনি খুব খুশি বলে জানান। ধান রেখে দিলে আরও দাম বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ভালো দাম পাবার আশায় প্রতিবেশী কৃষকরা পুরো পাকেনি এমন ধানও কেটে ফেলছে।’

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ‘এবার সরকার ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য গত বছরের চেয়ে বেশি এবং সঠিক সময়ে ঘোষণা করেছে। এতে কৃষকরা তাদের ঘাম ঝরানো ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। এবার সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪০ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবে। ২৭ টাকা দর হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা। আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। এতে কৃষকরা আশ্বস্ত হয়েছেন। ধানের দাম নিয়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে নেই। চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনছে। ফলে নতুন ধানের দাম কৃষকরা ভালোই পাচ্ছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক কে এম মনিরুল আলম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৫৬ লাখ ৭২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। এ জমি থেকে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২২০ টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৬ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। মাঠে পুরোদমে আমন ধান কাটা হচ্ছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা খুশি।’


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ