বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট অ্যামাজন দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১ হাজার ১০০ এর বেশি নদী। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশিরভাগ নদীই আজ মরুভূমি হবার পথে। কয়েকটি নদীর পানি নেমেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে। এতে সংকটের মুখে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন।
পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে খ্যাত অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় চিরসবুজ বনটি থেকে প্রবাহিত হয়েছে ১ হাজার ১০০ এর বেশি নদী। যার মধ্যে ১৭টির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের বেশি। লাতিন আমেরিকার ৮টি দেশ নির্ভর করে এই নদীগুলোর ওপর।
তবে অ্যামাজন অববাহিকায় পানির স্তর নেমেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে। অনেক নদীই এখন নৌপথ হিসেবে অনুপযোগী। টানা দ্বিতীয় বছরের খরায় সোলিমোয়েস নদীর বুকে পানি এখন শূন্যের কোটায়। আরেক নদী টেফেতেও নেই পানির অস্তিত্ব। গেল বছর এই নদীতে পানির অভাবে মারা গেছে ২০০ এর বেশি বিপন্ন ডলফিন। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত দাবানলের কারণেও ঘনীভূত হচ্ছে সংকট।
গ্রিনপিসের মুখপাত্র রোমুলো বাতিস্তা বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদীর চর জেগেছে সোলিমোয়েসে। দ্বিতীয় বছরের মতো অ্যামাজনে খরা দেখা গেলো। এমনটা কখনোই হয়নি।’
ব্রাজিলের মানাউস শহরে রিও নেগ্রো নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোলিমোয়েস নদী। দুই নদীর সংযোগে বিস্তৃত হয়েছে অ্যামাজন নদী। মানাউসে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদীটির পানির স্তরও নেমে গেছে ১২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে।
কামবেবার আদিবাসী নেতা টোমে ক্রুজ বলেন, ‘আমরা যদি প্রকৃতিকে সংরক্ষণ না করি, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কীভাবে বেঁচে থাকবে? প্রকৃতিকে ধ্বংসের নেশায় উন্মত্ত সবাই। কেউ গাছ কাটছে, কেউ বন পুড়িয়ে ফেলছে। এভাবে চললে আমরা কীভাবে বাস করবো?’
অ্যামাজন রেইন ফরেস্টে অরক্ষিত প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা। বনদস্যুদের কবলে প্রতিনিয়তই আয়তন হারাচ্ছে অ্যামাজন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দাবানল। আগস্টে প্রকাশিত অ্যামাজন সংরক্ষণ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত এই বনটিতে কার্বনের মজুত ৭ হাজার ১৫০ কোটি টন। যা ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় দ্বিগুণ। তাই বন রক্ষা না করতে পারলে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়া গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাবে বাড়বে তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে না পারলে ভূপৃষ্ঠে বাড়বে তাপমাত্রা, নদী পরিণত হবে মরুভূমিতে।