চোট থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার শেষ ভাগে থাকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থাকবেন না, সে খবর আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন আল নাসর কোচ। ম্যাচটাকে নিয়ে আকর্ষণ তাতেই শেষ। ইন্টার মায়ামি আর আল নাসরকে নিয়ে কে মাথা ঘামায়, এ ম্যাচ তো ছিল রোনালদো-মেসির দ্বৈরথের নবতর মঞ্চায়ন!
রোনালদো থাকবেন না দেখেই কি না, লিওনেল মেসিও প্রায় পুরোটা সময় থাকলেন বিশ্রামে। শুধু শেষ ৭ মিনিটে নেমে টিকিট কেনা দর্শকের পয়সা উসুল করিয়েছেন।
তবে তার আগে যা হলো, তাতে বেঞ্চে বসে বসে মেসি বুঝলেন, র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও গত দুবছরে ‘গৌরি সেন’ হয়ে অর্থ ঢালার সুফল পেয়েছে সৌদি লিগ। রোনালদোর আল নাসরের কাছে যে ৬-০ গোলে হেরেছে মেসির ইন্টার মায়ামি!
সৌদি আরব সফরে এসে প্রথম ম্যাচে নেইমারহীন আল হিলালের সঙ্গে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটি। সে ম্যাচে তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছিলেন মেসিরা। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রোনালদোহীন আল নাসর মায়ামিকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে।
অবশ্য ইন্টার মায়ামির পক্ষে বড় যুক্তি হতে পারে, মায়ামি যেখানে এমএলএসের আগে প্রাক মৌসুম প্রস্তুতিই মাত্র শুরু করেছে, সৌদি লিগে রোনালদোরা অর্ধেকের বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন! ফিটনেসে, দলীয় সমন্বয়ে দুই দলের তুলনাই তো হয় না!
লিওনার্দো কাম্পানিয়ার বদলি হিসেবে ৮৩ মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। তখন মায়ামি পিছিয়ে ৬-০ গোলে। মাঠে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি ৩৬ বছর বয়সী মেসি।
এদিন কিংডম অ্যারেনাতে ম্যাচের শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে আল নাসের। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ওতাভিওর গোলে এগিয়ে যায় কাস্ত্রোর শিষ্যরা। ৯ মিনিটের ব্যবধানে আরও দুবার গোল-উৎসব করে আল নাসর। ম্যাচের ১০ মিনিটে আন্দারসন তালিসকা ও ১২ মিনিটে গোলের খাতায় নাম লেখান আইমেরিক লাপোর্ত।
এর মধ্যে লাপোর্তের গোলটি তো চোখধাঁধানো! নিজেদের অর্ধ থেকে ফ্রি-কিক পেয়েছিল আল নাসর, মায়ামি গোলকিপার পোস্ট ছেড়ে অনেক সামনে দাঁড়ানো দেখে ওই ফ্রি-কিকেই লাপোর্ত শট নেন পোস্টের দিকে। বল জালে!
৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যান লুইস সুয়ারেস-সের্হিও বুসকেতসরা। দ্বিতীয়ার্ধেও তিনবার গোল উদ্যাপন করে নাসর। একপাক্ষিক গোল উৎসব বেঞ্চ থেকে হতাশ দৃষ্টিতে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না মেসির। ৫১ মিনিটে স্পটকিক থেকে ম্যাচের চতুর্থ গোলটি করেন তালিসকা। ৬৮মিনিটে গোল ব্যবধান বাড়ান সৌদি আরবের মিডফিল্ডার মোহাম্মদ মারান।
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের ১৭ মিনিট আগে মায়ামির কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন তালিসকা। হ্যাটট্রিক পূরণ হয় ৩০ বছর বয়সী ব্রাজিল স্ট্রাইকারের। মায়ামি যখন ৬-০ তে পিছিয়ে, ৮৩ মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। এরপর ম্যাচে আর কোনো গোল হয়নি।
স্কোরলাইন দেখে অবশ্য ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। ৪৭ শতাংশ সময় বল পায়ে ছিল সুয়ারেস-বুসকেতসদের। কিন্তু মায়ামি ব্যর্থ হয়েছে আক্রমণভাগের ব্যর্থতায়। আল নাসর ২১টি শট নিয়েছিল, যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ১৪টি। অন্যদিকে মায়ামির ১২ শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র ৩টি।
আল নাসরের ম্যাচ নিয়ে টানা ১২ ম্যাচে জয়হীন থাকল মায়ামি। প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে চারটি ম্যাচ খেলে মায়ামির সর্বোচ্চ সাফল্য এল সালভাদরের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র। বাকি তিনটিতেই হেরে বসেছেন মেসিরা। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পরের প্রস্তুতি ম্যাচে হংকং একাদশের বিপক্ষে খেলবে মায়ামি। অন্যদিকে আগামী সপ্তাহে লিগে আল হিলালের বিপক্ষে খেলতে নামবে আল নাসর।