প্রবাসীদের যতো আনন্দ সবটাই পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। ঈদ-পার্বনে তাই কিছুটা বেশি অর্থ পাঠানোর চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু এ বছর চিত্রটা ব্যতিক্রম। ঈদের আগে কমেছে প্রবাসী আয়। যা বিগত বছরগুলোর একই সময়ের তুলনায় কম। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বলছে, ডলারের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহে আগ্রহ দেখিয়েছে কম।
ঈদের ঠিক আগে মার্চ মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬৭ কোটি ১৭ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংক এনেছে ৮১ লাখ ১০ হাজার ডলার। যেটা আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে প্রায় ১৬ কোটি, আর জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ১২ কোটি ডলার কম। তবে গত বছরের ঈদের আগেও এ আয় ছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আর ২০২২ সালে ঈদের আগে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকে আসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বলছে, ঈদের আগে রেমিট্যান্স কমার প্রভাব এই ব্যাংকটিতেও রয়েছে। যদিও ঈদের আগের বাকিটা সময়ের দিকে তাকিয়ে আছে ব্যাংকটি।
এমটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তিন মাস রেমিট্যান্স আমরা বেশ ভালো পেয়েছিলাম। কিন্তু গত মার্চে কিছুটা কম পেয়েছি। সারামাসে আমাদের মাত্র ১৯ টা ওয়ার্ক ডে ছিলো। এটাও একটা কারণ হতে পারে।’
অন্যদিকে ব্র্যাক ব্যাংক বলছে, ডলারের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছে কম। এতেই কিছুটা কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর. এফ. হুসেন বলেন, ‘ডলারের চাহিদা কিন্তু কমেছে। আবার অনেক ব্যাংক আনতেও চাচ্ছে না। তাই সার্বিকভাবে আমাদের দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহটাই কমে গেছে।’
যদিও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমার পেছনে বড় অংশ দায়ী করা হয় হুণ্ডিকে। কারণ করোনার সময়ে হুন্ডিতে অর্থ পাঠানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানোর হার কিছুটা বেড়েছিল। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সে বছর ঈদেও রেমিট্যান্স পাঠানোর হার ছিল বেশি।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের উপর না ছেড়ে বাফেদা ও এবিপির হাতে দেয়াতে কমছে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার। সঙ্গে হুন্ডিতে রেট বেশি পাওয়ায় সেদিকে ঝোঁকেন অনেক প্রবাসী। আবার ডলারের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকে পরিবারের খরচ মেটানোর বাইরে বাকি অর্থ ধরে রাখেন দাম বৃদ্ধির আশায়।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রেমিট্যান্স তো পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য পাঠায়। সেখানে হুন্ডি মার্কেটের উপর একটা প্রভাব পড়তে পারে। যদি হুন্ডির রেট বেড়ে যায় তাহলে সেদিকে যাওয়ার আগ্রহটা বাড়বে।’