আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। এমন উৎসবের দিনে দেশবাসীর আনন্দ আরো বাড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নেপালকে হারিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। ‘ডি’ গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পর সুপার এইটে গেল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
কিংস্টনে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভার ৩ বলে ১০৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ রান করেন সাকিব আল হাসান। জবাবে খেলতে নেমে ১৯ ওভার ২ বলে ৮৫ রানে অলআউট হয় নেপাল।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ভুগেছে নেপাল। টার্নিং উইকেটেও নতুন বলে রীতিমতো আগুন ঝরিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কুশাল ভুর্তেলকে সাজঘরে ফিরিয়ে নেপাল শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন তানজিম সাকিব। তার ফুলটস ডেলিভারীতে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন এই ওপেনার।
এক বল পর আনিল শাহকেও ফিরিয়েছেন তানজিম সাকিব। অফ স্টাম্পের ওপর করা ফুল লেংথের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন আনিল। ২ বল খেলে ডাক মেরেছেন তিনি।
নিজের পরের ওভারে আরও এক ব্যাটারকে ফেরান তানজিম সাকিব। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে খাটো লেংথে করেছিলেন, সেখানে বাউন্ডারির আশায় ছিলেন রোহিত। কিন্তু পার করতে পারেননি রিশাদ হোসেনকে। ক্যাচ যায় সরাসরি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। ৬ বলে ১ রান করে ফেরেন রোহিত।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভার করতে এসে তানজিম সাকিবের সঙ্গে উইকেট পার্টিতে যোগ দেন মুস্তাফিজুর রহমান। অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বল কভারের উপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন আসিফ কিন্তু বল চলে যায় সাকিবের শরীর বরাবর, সেখানে শর্ট কভারে দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন সাকিব। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চারে ১৬ বলে ১৭ রান করেন তিনি।
প্রথম সাত ওভারের মধ্যেই নিজের কোটার ৪ ওভার শেষ করেন তানজিম সাকিব। টানা চতুর্থ ওভার করতে এসে নিজের স্পেলের শেষ বলে সানদিপ জোরাকে ফেরান তিনি।। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পয়েন্টে রিশাদ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন সানদিপ। ৪ ওভারে দুই মেইডেনসহ মাত্র ৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। বিশ্বকাপে পুরো ৪ ওভার করা বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম রানের রেকর্ড।
২৬ রানে ৫ উইকেট হারানো নেপাল ঘুরে দাঁড়ায় ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে। কুশল মাল্লা ও দিপেন্দ্র সিং আইরি মিলে দলকে বিপদ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ২৭ রান করা কুশলকে ফিরিয়ে ৫২ রানের এই জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ।
এরপর আইড়ি এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করলেও তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ২৫ রান করেছেন আইড়ি। আর নেপাল থেমেছে ৮৫ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার তানজিম সাকিব। তাছাড়া দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। এই বাঁহাতি পেসার ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাছাড়া ২ টি উইকেট পেয়েছেন সাকিব।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন তানজিম তামিম। তিন নম্বরে নেমেও রানের দেখা পেলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেছেন তিনি। ৫ বলে ৪ রান করেন তিনি।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন দাসও। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি পুল করার চেষ্টায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তিনি। উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ নেন আসিফ শেখ। ১ চারে ১০ রান করতে ১২ বল খেলেছেন লিটন।
চারে নেমে সুবিধা করতে পারেননি ইনফর্ম তাওহিদ হৃদয়। ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে আসা রোহিতের বল স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন তিনি। ৭ বলে ৯ রান করেছেন তরুণ এই ব্যাটার। তাতে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। বিপরীতে স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে মাত্র ৩১ রান।
দলের এমন বিপদের মুহূর্তে ভালোই খেলছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে সেই জুটি ভাঙে রান আউটে। সন্দীপ লামিচানের ফুল টস মিড অফের দিকে খেলে শুরুতে রানের জন্য ডাকেন সাকিব। পরক্ষণেই শুধরে নেন নিজেকে। তবে ততক্ষণে প্রায় মাঝ ক্রিজে মাহমুদউল্লাহ। গুলশান ঝার থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন লামিচানে। বিদায়ঘণ্টা বাজে দুই চারে ১৩ বলে ১৩ রান করা মাহমুদউল্লাহর। স্ট্রাইক প্রান্তে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন সাকিব।
এরপর সাকিব চেষ্টা করেছেন উইকেটে থেকে মানিয়ে নেয়ার। তবে ২২ বল খেলে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি। এরপর জাকের আলি-রিশাদ হোসেনরা শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাতে ৮৮ রানে নবম উইকেট হারিয়ে অলআউটের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
তবে শেষ উইকেট জুটিতে ১৮ রান তুলে দলকে একশ পার করান তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিন তাসকিন করেন ১২ রান। এর আগে রিশাদ হোসেনের ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান।