বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার দেশের নাম ও সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার সরকারের নেই: জাসদ শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন রোনালদোকে ধরে রাখতে ‘অবিশ্বাস্য’ প্রস্তাব আল নাসরের গাজায় অস্ত্রবিরতির কৃতিত্বের দাবি বাইডেনের ক্রিকেট বোর্ডে স্বৈরাচারী প্রভাব, সমাধানের আহ্বান আমিনুল হকের ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া গণতান্ত্রিক দেশ গড়া সম্ভব নয়’ দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত নারীর মৃত্যু কোনো ভোটই রাতে হবে না: ইসি মাছউদ বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বদলীয় সভায় যোগ দিচ্ছেন সালাউদ্দিন আহমেদ ‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব শিক্ষার্থী বই পাবে’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিন্দা ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐক্যই মূল চ্যালেঞ্জ

উত্তরা কলেজ: প্রাথমিকে নিয়োগ পাওয়া ২০ শিক্ষকের মাধ্যমিকে এমপিওভূক্তি, ৪.২৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক
আপডেট : অক্টোবর ৬, ২০২২

ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজে’র প্রাথমিক শাখায় নিয়োগ পাওয়া ২০ জুনিয়র শিক্ষককে অবৈধভাবে মাধ্যমিক শাখার সহকারী শিক্ষক হিসেবে দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) ভুক্ত করা হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান মোল্লা ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় অবৈধভাবে তাদের এমপিওভূক্ত করে সরকারি তহবিলের প্রায় ৪.২৯ কোটি আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে মাউশি ঢাকা অঞ্চলের তদন্তকারী দল।

মাউশি’র কলেজ পরিদর্শক ও ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছাম্মৎ সাহারা খানমের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল তাদের তদন্তে এ অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে বলে মাউশি মহাপরিচালক ও সহকারী পরিচালকের (মাধ্যমিক-১) দপ্তরে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গত ৫ এপ্রিল, ২০২২ পাঠানো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জুন মাউশি’র মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেন। এর প্রেক্ষিতে উপ-পরিচালক নিজেই বিষয়টি তদন্ত করেন এবং গত রবিবার (২ অক্টোবর) প্রতিবেদনটি জমা দেন।

প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির প্রধান সাহারা খানম কলেজ কর্তৃপক্ষের এসব অনিয়মের সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ওইসব শিক্ষকের কাছে থেকে অর্থ আদায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি প্রতিবেদনে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ওই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।

মাউশি ঢাকা অঞ্চলের একটি সূত্র জানিয়েছে, তদন্তকালে কলেজটির অভিযুক্ত শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এতেও কাজ না হওয়ায় এবং ওইসব শিক্ষককে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ায় মাউশি ঢাকা অঞ্চলের সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা খোররম মোল্লাহ’র সহায়তায় কয়েকজন শিক্ষক তদন্তকারী দলের প্রধান ও অন্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি অভিযোগকারী সফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে মাউশি মহাপরিচালকের দপ্তরে জমা হওয়া সফিকুল চৌধুরীর একটি অভিযোগ অনুযায়ী, খোররম মোল্লাহ’র নেতৃত্বে কলেজটির শিক্ষক আবদুল মালেক, জহিরুল ইসলাম ও মোহা. নূরউদ্দিন গত সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাহারা খানমের দপ্তরে যান এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন না দিয়ে চাপ দেন। এতে সম্মত না হলে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

সূত্র জানায়, কলেজের ওই ২০ শিক্ষকের পক্ষে প্রতিবেদন দিতে এবং কোন ব্যবস্থা না নিতে খোররম মোল্লা আর্থিক সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করতে সহায়তা করছেন। এক্ষেত্রে তিনি তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও তোয়াক্কা করছেন না।

অভিযুক্তদের শিক্ষকদের মধ্যে আবদুল মালেক (ডি৪৭৯৬০৪), মিনহাজুর রহমান (ডি৪৭৯৬০৩), আতিকুর রহমান (ডি৪৭৯৬০৫), মোহাম্মদ গোলজার হোসেন (ডি৪৭৯৬০৬), জহিরুল ইসলাম (ডি৪৭৯৬০৭), আফরোজা খাতুন (ডি৪৭৯৬০৮), মোহাম্মদ আবদুল হান্নান মিয়া (ডি৪৭৯৬০৯), মনজুরুল হক মজুমদার (ডি১৩৬৩৪১), আবুল কালাম মো. শহিদুল্লাহ (ডি৪৭৯৬১০), শামীমা আফরোজ (ডি৪৭৯৬১১), হনুফা বেগম (ডি৪৭৯৬১২), মো. নূরউদ্দিন (ডি৪৭৮৮০৫), সুভাষ চন্দ্র মিত্র (ডি৪৭৮৮০৫), মুহাম্মদ লুৎফর রহমান (ডি৪৮১৪১২), মেহেরুন নেছা খানম (ডি৪৮১৪০৭), পারভীন আক্তার (ডি৪৮১৪১১), জিয়াদুল হক (ডি৪৮২৫৪০), জাহাঙ্গীর হোসেন (ডি৪৮২৫১১), জিন্নাতুন নেছা (অবসরপ্রাপ্ত) ও আফরোজা বেগম (ডি৪৮১৪০৮) অবৈধভাবে এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের ৪.২৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এদের মধ্যে জিন্নাতুন নেছা সম্প্রতি অবসরে যান এবং আফরোজা বেগম গত এপ্রিলে মৃত্যুবরণ করেন।

অভিযোগ অনুযায়ী এসব শিক্ষক প্রাথমিক শাখার জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দিলেও এমপিওভূক্ত হন মাধ্যমিক শাখার সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এজন্য তাদের কোন পূর্বানুমতিও নেই। কোন অনুমোদনও নেই। তাদের অবৈধভাবে এমপিওভূক্ত করা হয়েছে। এতে কলেজের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অধ্যক্ষ তাদের সহায়তা করেছেন।

সহকারী শিক্ষক আবদুল মালেক ২১.০৫ লাখ, মিনহাজুর রহমান ২১.২৩ লাখ, আতিকুর রহমান ২০.৯৯ লাখ, গোলজার হোসেন  ২১.২২ লাখ, জহিরুল ইসলাম ২১.২৪ লাখ, আফরোজা খাতুন ২৩.৪৫ লাখ, হান্নান মিয়া  ৩১.৮৫ লাখ, মনজুরুল হক ২৩.৪৬ লাখ, আবুল কালাম শহিদুল্লাহ ২১.৪৩ লাখ, শামীমা আফরোজ ২১.৬৭ লাখ, হনুফা বেগম ২২.৬১ লাখ, নূরউদ্দিন ২১.০৯ লাখ, সুভাষ মিত্র ২৭.৯৯ লাখ, লুৎফর রহমান ২৪.২৪ লাখ, মেহেরুন নেছা ২১.৪৮ লাখ, পারভীন আক্তার ২২.৫৯ লাখ, জিয়াদুল হক ২১.১২ লাখ, জাহাঙ্গীর হোসেন ১৬ লাখ, জিন্নাতুন নেছা (অবসরপ্রাপ্ত) ২৪.১০ লাখ এবং আফরোজা বেগম এমপিওভূক্তির পর তার চাকরি জীবনের সমূদয় টাকাই আত্মসাৎ করেছেন।

কলেজের এসব শিক্ষক ২০০০ সালে এমপিওভূক্ত হলেও তদন্তকালে তদন্ত কমিটি ২০০২ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ২১ জুলাই পর‌্যন্ত ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এসব শিক্ষক ১৯৯৭, ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে কলেজের চাকরিতে যোগ দেন।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ অনেক। মাঠ পর্যায়ে লোকবল কম থাকায় অনেক সময় অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দেরি হচ্ছে। তবে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং হবে।’

একজন অভিভাবক সফিকুল ইসলাম চৌধুরীর অভিযোগের পর দুদক গত ৫ এপ্রিল তদন্ত করার জন্য মাউশি মহাপরিচালককে চিঠি দেয়। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে গত ২০ জুনের চিঠিতে ১৯ জন প্রাথমিক শাখা শিক্ষকের এমপিও বাতিল করে এ পর্যন্ত আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগ সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত করে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয় ঢাকার আঞ্চলিক উপ-পরিচালককে।

তদন্তের পর অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কাছে ১৯ শিক্ষকের ২০০০ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত বেতনের হিসাব বিবরণী পাঠাতে ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. সাহারা খানম চিঠি দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় জুনিয়র শিক্ষকের পদ বিলুপ্ত করা হয়। উত্তরা হাইস্কুলে ১৯৯৭, ১৯৯৮ ও ২০০০ সালে ১৬তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা পরিপন্থি। জুনিয়র শিক্ষকরা ২০০০ সালে দশম গ্রেডে এমপিওভুক্ত হন এবং ২০১২ সালে উচ্চ নবম গ্রেড পান। ২০ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন শিক্ষক মারা গেছেন। অবশিষ্ট ১৯ জন শিক্ষকের এমপিও বাতিল এবং উত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে জালিয়াতির মাধ্যমে জুনিয়র শিক্ষকদের সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত করা হয়। উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান মোল্লা সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ২২ বছর ধরে জালিয়াতির বিষয়টি গোপন রাখেন তিনি।

হাফিজুর রহমান মোল্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানের বাইরে আছি। এ বিষয়ে এখন কিছু বলবো না। আমি ঢাকায় নেই। কিছু জানার থাকলে দুদিন পরে আসেন।’


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ