চিলাহাটি ষ্টেশন থেকে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৭১ কিলোমিটার, অথচ এই ট্রেনটিতে উঠতে উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার মানুষকে প্রথমেই দূরত্ব ভেদে তিনশো থেকে চারশো কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ষ্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতে হবে। তারপর ঢাকা থেকে সমপরিমান দূরত্বে ট্রেন যাত্রা করে চিলাহাটি উল্টো আসতে হবে। এতে সাতশো কিলোমিটার থেকে আটশো কিলোমিটার অতিরিক্ত ট্রেন জার্নি করতে হবে। এর বিপরীতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে, সেই সাথে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হবার কারণে মিতালী এক্সপ্রেসের প্রতি উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
বহুল প্রত্যাশিত মিতালী এক্সপ্রেসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাই উদ্বোধনের পরে তেমন সাড়া ফেলেনি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে আসা মিতালী এক্সপ্রেস।
দীর্ঘ ৫৭ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর ভারতের হলদি বাড়ি ষ্টেশন হয়ে, নীলফামারী জেলার চিলাহাটি দিয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে ভারতের উত্তর বঙ্গের সাথে বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের রেল সংযোগ স্থাপিত হয়। এর এক বছর পর ২০২১ সালের ২৩ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যাত্রী বাহী ট্রেন চলাচলের শুভ উদ্বোধন করেন। কোভিড পরিস্থিতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল, সকল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত ১লা জুন থেকে সপ্তাহে চার দিন ঢাকা টু শিলিগুড়ি মিতালী এক্সপ্রেস চলাচলের জন্য যাত্রা শুরু করে। মিতালী এক্সপ্রেসকে ঘিরে শুরুতেই দুই বাংলায় মানুষের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর বঙ্গে কোনো স্টপেজ না থাকায় বর্তমানে যাত্রী সংকটে পড়েছে মিতালী এক্সপ্রেস।
১লা জুন মিতালী এক্সপ্রেস প্রথমবারের জন্য ভারতের হলদিবাড়ী ষ্টেশন পার হয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি ষ্টেশনে প্রবেশ করে, এখানে রুটিন চেকআপ শেষ করে ঢাকার উদ্দেশে বিরতিহীন যখন ছেড়ে যায়, তখন থেকে উত্তর বঙ্গের ০৮ জেলার মানুষের মাঝে মিতালী এক্সপ্রেস চড়ে ভারত ভ্রমণের ইচ্ছে ফিকে হয়ে যায়। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মিতালী এক্সপ্রেসে চিলাহাটি ষ্টেশনে শুধুমাত্র রুটিন চেক আপ ব্যতীত কোন যাত্রী উঠা নামার সুযোগ না থাকায় উত্তর বঙ্গের ৮জেলার মানুষ আশাহত। এই একটি কারণে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্বোধনের পর থেকে যাত্রী খরা চলছে।
নীলফামারীর ব্যাবসায়ী মুশফিকুর রহমান জানান, মিতালী এক্সপ্রেসে চড়ে ভারতের শিলিগুড়ি যাবার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু এই ট্রেনে চড়তে উল্টোপথে ঢাকা যেতে হবে আবার একই পথে ফিরে চিলাহাটি আসতে যতক্ষণ সময় লাগবে তার অর্ধেক সময়ে আমি বাংলাবান্ধা হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবো, এতে অর্থ সময় দুটোই বাঁচবে।
রংপুর শহড়ের জুম্মা পাড়ার বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান বলেন বাংলাদেশ থেকে ট্রেনে চড়ে দার্জিলিং ভ্রমণ করার ইচ্ছে ছিল, মিতালী এক্সপ্রেসে পার্বতীপুর অথবা চিলাহাটি ষ্টেশনে উঠার সুযোগ না থাকায় ঢাকায় গিয়ে এই ট্রেনে উঠা রংপুর বাসীর জন্য কষ্ট সাধ্য, তাই মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে উত্তরবঙ্গের মানুষের কথা চিন্তা করে, ঢাকার পরে পার্বতীপুর অথবা চিলাহাটিতে কাষ্টম ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে উঠার ব্যাবস্থা রাখার দাবি জানাচ্ছি।
নীলফামারী জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি ভারত বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে চিলাহাটি ষ্টেশনে যাত্রী উঠা ও নামার জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেবার জন্য।
জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল চিলাহাটি দিয়ে ভারতের হলদিবাড়ি ষ্টেশনের রেল সংযোগ স্থাপনের, সরকারের উদ্দোগে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি শুভ উদ্বোধন হলেও এর সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। সরকারের কাছে তাই দাবি জানাচ্ছি মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার মানুষ যাতে সহজে ভ্রমণ করার সুযোগ পায় এজন্য চিলাহাটি ষ্টেশনে যাত্রী উঠা নামার ব্যাবস্থার দাবি জানাচ্ছি।