বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আমরা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। তাই কাউকে পেছনে ফেলে রেখে উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা একেবারেই বৃথা। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিবেচনায় আমাদের উত্তম কৃষি, উত্তম পুষ্টি এবং উন্নত জীবনের দিকে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক, যা আমাদের দীর্ঘমেয়াদে অন্তর্ভুক্তমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সহনশীল শহর গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কের ২৭ নম্বর মোড় থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত একটি সচেতনতামূলক র্যালিতে বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় র্যালি পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন,ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্ণব দাস, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের শিক্ষক ইয়ামিন মল্লিক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। র্যালিতে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফসল উৎপাদনে আমাদের দেশ এখন বিশ্বে একটি উদাহরণ। আমরা ধান ও সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এক ইঞ্চি কৃষি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে, সে লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নগর এলাকায় ছাদকৃষিকে উৎসাহিত করে পুষ্টির চাহিদা পূরণে অবদান রাখা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি নগর এলাকায় তাপমাত্রাও হ্রাস পাবে।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে হবে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে যেন কোন অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি না হয়, সেদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্ণব দাস বলেন, কাঁচা বাজারগুলো আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য ক্রয়ের অন্যতম জায়গা। কিন্তু বাজারের মান ভালো না হওয়ায় খাদ্যপণ্য দূষিত হয়। যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকা, যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে বাজারের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জনগণ। আজকের র্যালি থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিতে কাঁচাবাজারের মান উন্নয়নের আহ্বান জানাই।
ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের শিক্ষক ইয়ামিন মল্লিক বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের সাত ধাপ অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। ইউনেপ ২০২১ এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট খাদ্য অপচয় হয় ১ হাজার ৬০ কোটি কেজি। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে খাবার অপচয় হয়। আমাদের খাবার অপচয়রোধে সচেতন হতে হবে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, দেশবাসীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরাপদ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, সহায়ক উপকরণ প্রদান এবং নিয়মিত মনিটরিং করছে। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকগণ নিরাপদে সবজি চাষ করলেও সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষকের বাজারের মাধ্যমে কৃষকগণ সরাসরি তাদের উৎপাদিত নিরাপদ পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিলে একদিকে কৃষকগণ যেমন পণ্যের যথাযথ মূল্য পাবেন, তেমনি ভোক্তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
উল্লেখ্য, ‘ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’- এই প্রতিপাদ্যে এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস। প্রতিবছর ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে থাকে। ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা, অপুষ্টি, এবং খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য।