বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মধ্যেও প্রায় ৫৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সারাদেশে স্কুল-কলেজ খুলেছে। শুরু হয়েছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ১৭ মাস পর স্কুল-কলেজ খুললেও রুটিন অনুযায়ী প্রথম দিনই প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা থেকে এমন তথ্যই জানা গেছে।
এদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন মাধ্যমিক থেকে কলেজ স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠদান চলছে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) জুড়ে দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনা অনুসরণ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করে। ছাত্রছাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে সারিবদ্ধভাবে তাদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এক বেঞ্চে একজন করে জেড আকারে বসানো হয় শিক্ষার্থীদের। অনেক স্থানে সাত ফুটের বেঞ্চে দুজন করে বসানো হয়। সীমিত আকারে কয়েকটি স্তরে ধাপে ধাপে ক্লাস নেওয়া হয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেটে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে অনেক অভিভাবক প্রবেশ পথের গেটে ভিড় জমান। সেসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধিও কিছুটা ঢিলেঢালা দেখা যায়।
এদিকে সারাদেশের অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি ১৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিটরিং কাজ করছে মাউশির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠানো তথ্য একত্রিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে কাজ করছে এ শাখা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই শাখা পরিচালক আমির হোসেন রোববার সন্ধ্যায় বলেন, সারাদেশে ১৯ হাজার অনুমোদিত স্কুল-কলেজ থেকে প্রতিদিনের তথ্য প্রতিদিন পাঠাচ্ছে। বিকেল ৩টার মধ্যে ছক আকারে এসব তথ্য মেইলে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৪,৪৮৮টি বিদ্যালয় থেকে প্রথম দিনের সার্বিক তথ্য পাঠানো হয়েছে। প্রথম দিন সারাদেশে সব বিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল।
জানা গেছে, রাজধানীর কবি কাজী নজরুল সরকারি কলেজে রোববার বিভিন্ন পর্যায়ে ১,৬০৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১,৩১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতির হার ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। ১১৫ জন শিক্ষকের মধ্যে এদিন উপস্থিত ছিলেন ১১৩ জন।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে প্রথম শ্রেণির ৩৭৯ জনের মধ্যে ৩১১ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতির হার ৮২ শতাংশ। দশম শ্রেণির ৪১৫ জনের মধ্যে ৩৪৩ জন উপস্থিত ছিল, উপস্থিতির হার ৮২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এদিন স্কুলটির মোট ১৪৯ জন শিক্ষকের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন।
সরেজমিনে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কোনো শিক্ষার্থীর বাহিরে আনাগোনা নেই। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দুটি করে চারটি রুমে বসানো হয়েছে। একজন শিক্ষক তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে আসা ও শ্রেণিকক্ষে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নির্দেশনা দেওয়া শেষ হলে, নিজেরা জায়গায় বসে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন, গল্প করছেন। এরইমধ্যে একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের চেয়ারগুলো কিছুটা গাদাগাদি করে বসানো হয়েছে। চেয়ারগুলোর মাঝে ফাঁকা খুব কম।
এদিন প্রতিষ্ঠানটিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের চেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উপস্থিত কিছুটা কম দেখা গিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আসেনি। ক্যাম্পাসে আসতে পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও কারো কারো মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের ছাপও ফুটে উঠে।
এতদিন পর ক্যাম্পাসে আসার অনুভূতি জানতে চাইলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা জান্নাত বলেন, ‘মাস্ক পরেছি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছি। তবে ভয় লাগছে, বাসায় কেউ যদি আমার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়! বাসায় বাচ্চা ও বয়স্করা রয়েছেন।
আরেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী কে এম জাকারিয়া বলেন, গেইটে তাপমাত্রা মেপেছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েছে, মাস্ক পরতে হচ্ছে। শুরুতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রথম ক্লাসে। তারপরও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। অনেকদিন বন্ধু ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছি।
ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামল কুমার রায় বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। গেইটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা মাপার পর নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও আমাদের সহযোগিতা করেছে এবং তারাও বেশ সুশৃঙ্খল ও সচেতন মনে হয়েছে। আমরা সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করছি এবং সফল হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছে। সবাই মাস্ক ব্যবহার করেছে, মাস্ক ছাড়া কাউকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
এর আগে সকালে ওই শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, কোনো অভিভাবককে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় এখানে অভিভাবকদের চাপও কম দেখা যায়।