এই সরকারকে দুর্নীতিবাজদের আড়তদার বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সরকারের দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ গ্রেপ্তার নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা জেলা বিএনপি এই মানববন্ধন করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যদি ন্যূনতম বিবেক-বিবেচনা থাকত, তিনি রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছেড়ে দিতেন।
কারণ, এই অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় তাঁর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন। এরপর যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে অনেক কাটখোড় পোড়াতে হবে।
তিনি বলেন, অনেকেই গ্রেপ্তার নেতাদের মুক্তি দাবি করছেন। আমি বলব, তাঁদের মুক্তির দাবি নয়, তাঁদের মুক্ত করব। আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, কারাগারে যেসব নেতা রয়েছেন, তাঁদেরও মুক্ত করব।
সরকারকে উদ্দেশ্যে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, মানুষ বাঁচতে চায়। আর এই কারণে অচিরেই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে, সরকারের পতন নিকটে, শুঁটকি মাছ পাহারার জন্য যেমন বিড়াল রাখা যাবে না, তেমনি ভোট পাহারা জন্য এই সরকারকে রাখা যাবে না। কোথায় যাবেন সেটা খুঁজুন।
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের নেতা রিজভী, সরাফত আলী সপুসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি চাই। আমাদের দাবি একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। ৯৬ সালে জামায়াতের সাথে সেদিন তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ। সেদিন তারা আদমজীতে বিএনপির সমাবেশে বোমা হামলা করে বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার ৩২ নাম্বার বাসভবনে জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে নিয়ে বৈঠকে করেছেন সেই ছবি আছে। আপনি জনগণের আস্থা অর্জনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। ৭১ সালের পরে লুটপাট ও কম্বল চুরি করার রেকর্ড আপনাদের আছে। ক্ষমতায় থাকতেই হবে এই ধারণা থাকলে তাদের গণতন্ত্রমনা বলা যায় না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনি গণভবনের বসে আসন ভাগাভাগি করবেন, তা হতে পারে না। ৯১ সালে আপনি গোপালগঞ্জ ছাড়া বাকি আসনে পরাজিত হয়েছিলেন, আর খালেদা জিয়া ৫ টি আসনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজত্ব যার নেশা তার জন্য গণতন্ত্র নয়। আপনাকে ক্ষমতায় রেখে সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার কোনো দিনই ফিরে পাবে না।
সকল দূর্নীতির আরতদার বর্তমান সরকার প্রধান মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে আপনি কেনো ব্যাবস্থা নেননি। ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে আবারো চুক্তি করেছে অথচ ভারতেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হোক না হোক ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে কয়লার দাম ২০০ ডলার আর আদানির সাথে ৪০০ ডলারে চুক্তি করেছে। আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি সরকারের সাথে সরকারের নয়, একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে। দেশে এতো জ্বালানি সংকট কেন? আসলে টাকা নাই। বিএনপির দাবি মানবেন কি মানবেন তা আপনার বিষয়, কিন্তু জনগণের দাবি মেনে দিনের ভোট দিনে দিন, মানুষ আর রাতের ভোটে চায় না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়ুন না হলে আপনাদের কি হবে তা কেউ জানে না।
তিনি আরও বলেন, অচিরেই আপনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে, কোথায় যাবেন সেটা খুঁজুন। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, মানুষ বাঁচতে চায়। দেশটা কিন্তু ভাষনে মুক্ত হয় নাই, যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে। আবারো ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে। কাফনের কাপড় ছাড়া মানুষের দাফন হবার দিন ঘনিয়ে আসছে। মামলা আর রিজভীদের জেলে রেখে নির্বাচন দিবেন সেটা ভুলে যান। ১৮ সালের মতো বিএনপিকে নির্বাচন এ নিবেন, কাউকে ভাগিয়ে নিবেন তা হবে না। মানুষ আর ভাঙ্গা নৌকায় উঠবে না। বাংলাদেশের মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে না, কোনো দল নির্বাচনে যাবে না, যারা যাবে তারা বেইমান হবেন। খাদ্য রেখে খান, বেলা থাকতে ঘরে ফিরুন। বিএনপিকে ভয় ডর দেখিয়ে লাভ নাই, বিএনপি কাউকে ভয় পায় না। আপনি পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন, তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের আজ ফুঁসে উঠেছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। রিজভী, সরাফতকে আন্দোলন দমিয়ে রাখতে বন্দী করে রেখেছে এই অবৈধ সরকার। কিন্তু আমরা বলতে চাই কোনো কিছুই আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পারবে না।
তিনি বলেন, অচিরেই একদফা কর্মসূচি দিয়ে এই সরকারের পতন আন্দোলন শুরু করবো আমরা। আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপন বলেন, অবিলম্বে আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে হবে। গ্রেফতার করে আমাদের আন্দোলন কোনোভাবেই শেষ করা যাবে না। আমি আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে আপনাদের সবাইকে রাজপথে থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১ এর সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, কৃষক দলের খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।