বৃত্তান্ত ক্রীড়া প্রতিবেদক: এক ম্যাচের অপেক্ষা শেষে এক ম্যাচ বাকি রেখেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ ঘরে তুললো টাইগাররা। সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামী শুক্রবার।
এরআগে প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পর তৃতীয় ম্যাচে সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করা বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল ‘দ্বিতীয় ম্যাচ পয়েন্ট’-এর মতো। নাসুম আহমেদের স্পিন, মোস্তাফিজুর রহমানের ফাস্ট-স্পিনে নিউজিল্যান্ডকে ৯৩ রানে আটকে দিয়ে বাংলাদেশ কাজটা অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিল ম্যাচের প্রথম ভাগেই।
তবে এমন উইকেটে থিতু না হয়ে শট খেলতে যাওয়ার ভুল করে দ্রুত টপ অর্ডারের তিন উইকেট হারালে চাপে পড়ে মাহমুদউল্লাহরা। শেষ পর্যন্ত নাঈমের ৩৫ বলে ২৯ রানের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ৪৮ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ৫ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজও জিতেছে তারা, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটা প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়।
৯৪ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে তৃতীয় ওভারে কোল ম্যাকনকিকে স্লগ সুইপের চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে ফিন অ্যালেনের হাতে ধরা পড়েছেন লিটন দাস। এর আগে স্লগ সুইপেই একটা চার মেরেছিলেন তিনি। আগের ম্যাচেও সুইপ করে জোড়া চারের পর আবারও স্লগ করতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন লিটন, তবে সে ভুলটা আবারও করলেন তিনি। সাকিব অবশ্য এসে দ্বিতীয় বলেই কাট করে একটা চার মেরেছিলেন, পরের ওভারে ম্যাকনকিকে ছয় মেরেছিলেন নাঈম। তবে আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে এজাজ প্যাটেলের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে ভুল করেছেন সাকিব। বলে নাগাল না পেয়ে স্টাম্পড। সে ওভারে প্যাটেলকে সুইপ করতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হয়ে সিরিজে দ্বিতীয়বার শূন্যতে ফিরেছেন মুশফিক। হুট করেই তখন বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৩২।
৩২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সে চাপ সামাল দিতে আবারও দায়িত্ব নিতে হয়েছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে, সঙ্গে ছিলেন নাঈম। দুজনই ঢুকে যান খোলসে, ১২তম ওভারে শুধু একটা ছয় মেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ডাবলস নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে নাঈম ফিরেছেন ১৫তম ওভারে। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে একটা সূক্ষ্ম স্টাম্পিং থেকে বেঁচে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত আফিফ হোসেনকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেই ফিরেছেন। ম্যাকনকিকে মারা তাঁর চারেই জয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাঁহাতি ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে শূন্যতে ফেরান নাসুম আহমেদ। প্রথম ৪ বলে ডটের চাপ রবীন্দ্র কমাতে চেয়েছিলেন বড় শটের চেষ্টায়, তবে সেটা ব্যর্থ হয়েছে তাঁর। ফাইন লেগে সাইফউদ্দিনের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। পরের ওভারে এসে নাসুম ফিরিয়েছেন ফিন অ্যালেনকেও। আগেরদিনের মতোই ইতিবাচক শুরু করা অ্যালেন রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন, তবে শর্ট লেংথ থেকে বলটা তুলতে পারেননি ঠিকঠাক। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে আবারও ক্যাচ নিয়েছেন সাইফউদ্দিন।
১৬ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নিউজিল্যান্ডকে উদ্ধারের কাজটা শুরু করেছিলেন টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াং। পাওয়ার প্লেতে ২২ রান উঠলেও এগোচ্ছিলেন দুজন, তাঁদের ৩৫ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান। মেহেদীকে একটা চার মারার পর ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে বিশাল টার্নে ধোঁকা খেয়েছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথাম, সে বলটা মিস করে স্টাম্পড হয়েছেন তিনি।
১১তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে জোড়া আঘাত করেছেন নাসুম, সেটাও পরপর দুই বলে। প্রথমে ফুল লেংথ থেকে টার্ন করে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হয়েছেন আগের দিন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের অন্যতম নায়ক হেনরি নিকোলস। ঠিক পরের বলে ব্যাট বাড়িয়ে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হয়েছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। সে ওভারও মেডেন করেছেন নাসুম। টি-টোয়েন্টিতে নাজমুল ইসলামের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এক ইনিংসে দুই মেডেন নিলেন তিনি। ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৪ উইকেটের ফিগার নিয়ে বোলিং শেষ করেছেন তিনি, বাংলাদেশের হয়ে এর চেয়ে কম রান দিয়ে ৪ উইকেট আছে শুধু সাকিবের (৪/৯)।
টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে উইল ইয়াং আরেক দফা লড়াই শুরু করেছিলেন, এবার মোস্তাফিজের বোলিংয়ে ভেস্তে গেছে সেটা। ১৬তম ওভারে এসে ব্লান্ডেলের পর ম্যাকনকিকে ফিরিয়েছেন তিনি। ব্লান্ডেল সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে লং অনে নাঈমের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন। আর নিজের বলে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ম্যাকনকির ক্যাচটা নিয়েছেন মোস্তাফিজ নিজেই। মাঝে এজাজ প্যাটেলকে ভালো একটা ইয়র্কারে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন।
ইয়াংয়ের ফিফটি বা কিউইদের ১০০, কোনোটিই হয়নি মোস্তাফিজের শেষ ওভারের জোড়া আঘাতে। তাঁর কাটার বুঝতে না পেরে প্রথমে ক্যাচ দিয়েছেন ইয়াং, পরের বলে ব্লেয়ার টিকনার। মোস্তাফিজ ৪ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ১২ রান।