জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ফাঁসের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
কাফরুল থানায় এই আইনে মামলাটি দায়ের করেন এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় বাদী নিজেই থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করে। বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম মোস্তফা।
পাশাপাশি সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে- ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসের পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরিফ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহাবুবুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) আবদুল বাতেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সাবেক সিনিয়র মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মু. আশরাফ হোসেন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. রাকিবুল হাসান এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সাবেক সিস্টেম অ্যানালিস্ট অলিউল হাসান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক উপসচিব মো. তবিবুর রহমান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক সহকারী পরিচালক (বৈধ ও সঠিকতা যাচাইকরণ) মুহা. সরওয়ার হোসেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাবেক পরিচালক (চলতি দায়িত্বে), (বাজেট, হিসাব ও সাধারণ সেবা) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ম্যানেজার (সিকিউরিটি অপারেশন) মোহাম্মদ মহিদুর রহমান খান এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সফটওয়্যার ডেভেলপার মো. সিদ্দীকুর রহমান।
তথ্য বিক্রির প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আনা হয় এ মামলায়। ডিএমপির কাফরুল থানায় এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি সাইবার নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন।
মামলা করার পর থানা থেকে বের হয়ে বাদী এনামুল হক জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ফাঁস নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেই এই মামলাটি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই তথ্য ফাঁসের জন্য পতিত সরকারের নির্বাচন কমিশনের সকল কর্মকর্তারাও জড়িত।
তিনি জানান, সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে এবং ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রি করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন অভিযুক্তরা। যে তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। তৃতীয়পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। তথ্য বিক্রির প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আনা হয় এ মামলায়।
বর্তমান সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের অতি গোপনীয় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান এনামুল হক।