করোনার কারণে পরপর দুই বছর দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে হয়নি ঈদের জামাত। তবে এবার এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ঈদগাহ ময়দানের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মুসল্লীদের সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে মাটি ভরাট ও সংস্কার, রঙ করা, ধোয়া-মোছার কাজ শেষ পর্যায়ে। ঈদ জামাতে এবার ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমি। আর জামাতের সময় দেয়া হয়েছে সকাল ৯টায়। ময়দানের সার্বিক নিারপত্তায় থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
করোনার আগে এই ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এবারও ছয় লাখের বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। তবে ময়দানে ১০ লাখ মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গোর-এ শহীদ ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ জামাতের জন্য ময়দান প্রস্তুতের কাজ শেষ পর্যায়ে। মাঠে বালু ভরাট করা হয়েছে। রোলার দিয়ে মাঠ সমানের কাজও চলছে। মিনারগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে-মুছে রঙ করছেন শ্রমিকরা। মিনারের পেছনে ওজুর জন্য বসা ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে অস্থায়ী শৌচাগার। কাতারের জন্য লাইনের দাগও টানা হয়েছে।
মাঠে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য স্থাপিত হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই মাঠে ঈদের ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতগুলোতে যেমন নিরাপত্তা ছিল ঠিক সেই রকম বা তার চেয়েও বেশি নিরাপত্তা দিতে মাঠে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। প্রতিটি কাতারেই থাকবেন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। এছাড়া র্যাব ও বিজিবির টহলও থাকবে।
পুলিশ বলছে, মাঠে তিন থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। ইতোমধ্যে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ কাজ শুরু করছে। জেলার সর্বত্র সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং কাজ চলছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ময়দান ঘিরে কাজ করছে।
জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফুট। এরসঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিকের তৈরি। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।