অতিরিক্ত সময়ের গোলে কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের পর এবারই প্রথম মুখোমুখি হলো এই দু’দল। আর সে কারণেই প্রতিশোধের বিষয়টা ঘুরেফিরে আসছিল। ঘরের মাঠের চেনা আঙিনায় শেষমেশ প্রতিশোধটা নিয়েই নিল কলম্বিয়ানরা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে জয়ের পথেও ফিরেছে স্বাগতিক দলটি।
পুরো ম্যাচেই সেভাবে ছন্দ খুঁজে পেল না আর্জেন্টিনা। বিরতির পর তারা ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ পায় প্রতিপক্ষের ভুলে, তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে জয়ের পথে ফিরল কলম্বিয়া। প্রতিপক্ষের মাঠে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি ২-১ গোলে হেরেছে লিওনেল স্কালোনির দল।
ইয়ের্সন মসকেরা কলম্বিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরান নিকোলাস গনসালেস। পেনাল্টি থেকে স্বাগতিকদের জয়সূচক গোলটি করেন হামেস রদ্রিগেস।
এই হারে আর্জেন্টিনার ১২ ম্যাচের (১১ জয়, এক ড্র) অপরাজেয় যাত্রায় ছেদ পড়ল। সবশেষ তারা হেরেছিল গত নভেম্বরে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচেই ঘরের মাঠে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে।
গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল কলম্বিয়ার। এবারের জয়ে সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিতে পারল তারা।
অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে ছাড়া এই মাসের বাছাইয়ে গত রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়া তাদের আগের ম্যাচে ১-১ ড্র করেছিল পেরুর সঙ্গে।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৫২ শতাংশ সময় পজেশন ধরে রেখে গোলের জন্য ১৩টি শট নিয়ে মাত্র একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে আর্জেন্টিনা। বিপরীতে, স্বাগতিকদের ৯ শটের ৫টি লক্ষ্যে ছিল।
অষ্টম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় কলম্বিয়া। রদ্রিগেসের ক্রসে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি হেফারসন লের্মা।
দ্বাদশ মিনিটে হুলিয়ান আলভারেসকে ঠেকাতে পোস্ট ছেড়ে বাঁ দিকে বক্সের বাইরে চলে আসেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক, দুরূহ কোণ থেকে চেষ্টা করলেও ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ডের শট লক্ষ্যে থাকেনি।
ঘরের দর্শকদের উল্লাসে ভাসিয়ে ২৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। রদ্রিগেস ছোট করে কর্নারে এক সতীর্থের সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে উঁচু ক্রস বাড়ান দূরের পোস্টে, আর লাফিয়ে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন মসকেরা।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুটি ‘হাফ চান্স’ পায় আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়া কর্নার ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হওয়ার পর নিকোলাস গনসালেসের শট কর্নারেই বিপদমুক্ত করেন এক ডিফেন্ডার। ওই কর্নারের পর কোনাকুনি শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লাউতারো মার্তিনেস।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। হামেসের ভুল পাসে মাঝমাঠের কাছে বল পেয়ে সঙ্গে লেগে থাকা মসকেরার চ্যালেঞ্জ সামলে এগিয়ে যান গনসালেস। বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে জাল খুঁজে নেন ২৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
৬০তম মিনিটে রদ্রিগেসের সফল স্পট-কিকে ফের এগিয়ে যায় কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দি কলম্বিয়ার দানিয়েল মুনোসকে বক্সে ফাউল করায় ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি।
৭২তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর ভালো একটি সুযোগ পান দুরান। তবে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস বরাবর দুর্বল শট করেন তিনি।
৮৪তম মিনিটে সুযোগ পান লাউতারো মার্তিনেস। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি, তবে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে শট নিতে পারেননি সেরি আর গত মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় মার্তিনেস।
পরের মিনিটে এনসো ফের্নান্দেসের জায়গায় পাওলো দিবালাকে নামান আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। চার মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে উড়িয়ে মারেন রোমার এই ফরোয়ার্ড।
২০২৬ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় হার এটি। ৮ ম্যাচের ৬টি জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে তারা। তাদের সমান ম্যাচে ৪টি করে জয় ও ড্রয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে কলম্বিয়া।