কাগজের সংকট এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় শনিবার পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেনি শ্রীলঙ্কার প্রথম সারির দুটি পত্রিকা ‘দ্য আইল্যান্ড’ ও ‘দিবায়িনা’। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সবচেয়ে বড় সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
এখন থেকে দ্য আইল্যান্ড পত্রিকা ই-পেপার হিসেবে প্রকাশিত হবে জানিয়ে ছাপা সংস্করণ বন্ধ হওয়াতে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ।
১৯৮১ সালের অক্টোবর থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে পত্রিকাটি। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে পর্যটনখাত ও প্রবাসী আয় ধাক্কা খাওয়ায় দেশটির ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সরকার মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপি বিনিময়ের ক্ষেত্রে ভাসমান মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে নিউজপ্রিন্ট আমদানির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই কাগজ সংকটে লাখো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করে দেশটির সরকার।
বেসরকারি মালিকানাধীন উপালি নিউজপেপার জানিয়েছে, তাদের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য আইল্যান্ড’ ও সিংহল ভাষার পত্রিকা ‘ডিভাইনা’ এখন শুধুমাত্র অনলাইনে পড়তে পারা যাবে। দেশজুড়ে কাগজের অভাবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর কখনোই এমন অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হয়নি শ্রীলঙ্কা। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে তলানিতে নেমে গেছে।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে প্রথমবারের মতো তামিল রাজনৈতিক দল ‘তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স’ (টিএনএ) নেতাদের সঙ্গে শুক্রবার সাক্ষাৎ করেছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তামিল নেতারা তার সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেও পারেননি। দুইবার সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হওয়ার পরও শেষ সময়ে এসে কোনো কারণ ছাড়াই বৈঠক বাতিল করে সরকার। এ নিয়ে তামিলদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট।
এই মাসের শুরুর দিকে সরকার মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপি বিনিময়ের ক্ষেত্রে ভাসমান মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে নিউজপ্রিন্ট আমদানির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়।
আকস্মিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি–সংকটের কারণে হাজারো মানুষ ফিলিং স্টেশনের সামনে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
মুদ্রা বিনিময় সংকটের কারণে আমদানি বিধিনিষেধ থাকায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। পাশাপাশি ভারতেরও সহযোগিতা চেয়েছে দেশটি।
এর আগে, দেশটির শিক্ষা কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত কাগজ ও কালি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো কাগজের তীব্র ঘাটতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তাঁরা আরও জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, ‘প্রায় ৬০ লাখ বাসিন্দার ওই প্রদেশের স্কুলের অধ্যক্ষরা কোনো পরীক্ষাই নিতে পারবেন না কারণ প্রয়োজনীয় কাগজ ও কালি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করতে করতে অক্ষম।’
এ দিকে, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের ঘাটতি থাকায় তা দেশটির সব অর্থনৈতিক খাতকে প্রভাবিত করেছে এবং গত ফেব্রুয়ারিতেই মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ রেকর্ড সাড়ে ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
অপরদিকে, গত সপ্তাহেই গাড়ি চালকদের পেট্রল পাম্পে জ্বালানি নিতে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষায় কমপক্ষে চারজন মারা গেছেন।