বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
আরও ১৪ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব দেশের বাজারে আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম পুতুল, টিউলিপসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ৪ বছর করার সুপারিশ ‘দুইবারের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না’ সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ আইনশৃঙ্খলা বা‌হিনীর যারা বাড়াবাড়ি করেছে তাদের ধরা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নেতৃত্বদানে অগ্নিপরীক্ষার সামনে ডোনাল্ড ট্রাম্প উইজডেনের বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে তাসকিন বদলি তারকার গোলে লিভারপুলের ড্র দুই গোলে এগিয়ে থেকেও জয়হীন ম্যানসিটি ছাগলকাণ্ডে জড়িত মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার ‘ডেসটিনির এমডি রফিকুলের মুক্তিতে বাঁধা থাকছে না’ অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেকসহ সব আসামি খালাস

কৃষি বাজেটের ভর্তুকি দাঁড়াবে ২৫ হাজার কোটিতে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : জুন ৬, ২০২৪
কৃষি বাজেটের ভর্তুকি দাঁড়াবে ২৫ হাজার কোটিতে!

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রাধান্য পাবে ব্যয় সংকোচন নীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হাতে নেয়া হতে পারে নানামুখী উদ্যোগ। তবে, প্রাধান্য পাবে কৃষি খাত। ভর্তুকির ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ হাজার কোটি টাকায়। কৃষি রা বলছেন, কৃষি বীমা চালুর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনা বৃদ্ধিসহ ভোক্তাপর্যায়ে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর হাওরের বুক চিরে বয়ে গেছে খরস্রোতা ধনু নদী। হাওরবাসীর জন্য এটি কখনও আশীর্বাদ, কখনও হয়ে দাঁড়ায় অভিশাপের কারণ। তবুও নদীর জলে গা ভাসিয়ে আদিকাল থেকে সমকাল অতিক্রম করে নদীপাড়ের মানুষ। ভাসায় জীবন ও জীবিকার নাও। ঘাট ঘিরে বাড়ে ব্যস্ততা।

পড়ন্ত বিকেলে কিশোরগঞ্জ থেকে রসুলপুর ঘাটে ভিড়েছে ধান বোঝাই লঞ্চ। খালাস কর্মে ব্যস্ত একদল মজুর। আমিষের চাহিদা মেটাতে জাল পেতে বসে থাকে জেলে পল্লির কোনো এক জলদাস। তবে, আগের মতো কথা বলে না নদী। জল, ঢেউয়ে ভাটা পড়ে নাব্য সংকটে এখন মৃতপ্রায়। হারিয়েছে ঘাটের জৌলুসও।

একজন জেলে বলেন, ‘নদী ভরাট হয়ে গেছে। এখন নদীতে পানিও কম। এখন মাছ খুব কম পাওয়া যায়। আমাদের চলা খুব কষ্ট হয়।’

শুকনো মৌসুমে সমৃদ্ধির বার্তা আনে হাওর। দৃষ্টি জুড়ায় সোনালি ধানের খেত। দিগন্ত হয়ে ওঠে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এই সৌন্দর্যের পেছনে কাজ করেন একদল শস্য শিল্পী। আদতে তারাই একটু একটু করে বাংলাদেশেকে গড়ে তুলছে চতুরঙ্গ মাত্রায়। সোনার বাংলাকে তুলে ধরছে অনন্য উচ্চতায়। যদিও জিডিপি কিংবা বাজেটের মতো জটিল তত্ত্বে কখনোই তাদের দৃষ্টি ফেরে না। গাণিতিক মারপ্যাচের হিসেবেও তারা বড়ই আনাড়ি। ফলে প্রাচুর্যের দেয়ালে ডিঙানোর উচ্চ বিলাসও তাদের আচ্ছন্ন করে না। দিনশেষে মহাজনের টালিখাতায় সমান মাত্রায় লিপিবদ্ধ হয় ইজা-খরচ-জমা।

একজন কৃষক বলেন, ‘সারের দাম যদি একটু কমতো আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। সারের দাম বাড়ছে কিন্তু ধানের দাম তো বাড়ছে না।’

এক সময় হাওরে শুরু হয় ধান কাটা উৎসব। সেদ্ধ, মাড়াই চলে সমান তালে। প্রস্তুত হয় মধ্যস্বত্বভোগী আর সিন্ডিকেটের বলয়।

বাজারে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও মাঠপর্যায়ে বিক্রি দর মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। চলমান এই দর চিত্রে উৎপাদন খরচ ওঠাতেই হিমশিম অবস্থা কৃষকের। এ অবস্থায় দুয়ারে তাদের কড়া নাড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার গরুর খামারি ৩ সন্তানের জননী সামসুন নাহার। ১৫ বছর ধরে খামার করছেন তিনি। ১টি গরু দিয়ে শুরু করলেও এখন তার গরু ৬টি। পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ায় গত দু’বছরে খামার থেকে তাকে কমিয়ে ফেলতে হয় আরও ৫টি গরু। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মাংস ও ডিম উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সামসুন নাহার বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি এখন। রোগ-বালাইও বেশি হয় গরুর। ডাক্তার খরচ আর গরুর ওষুধের তো চড়া দাম।’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মনোরঞ্জন ধর বলেন, ‘খামারিরা সবসময় আমাদের সাথে আছেন। আমরাও তাদের সাথে আছি। তাদের গবাদিপশুর যেকোনো রোগ-বালাইয়ের জন্য সহযোগিতা করছি। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমেও আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’

দেশের বৃহৎ রপ্তানি খাত পোশাক শিল্পের পরেই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে পোল্ট্রি শিল্পে। যেখানে দেশের প্রান্তিক পর্যায় ৬০ লাখ মানুষ সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এই শিল্প খাতে। মূলত ২০০০ সালে এই শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে, তখন ক্ষুদ্র মাঝারি খামারির সংখ্যা ছিল ১লাখ ৪৮ হাজার। করোনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০২৪ সালে খামারের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৬০ হাজার। খাবারের দাম বাড়াসহ বিদ্যুৎ বিল এবং অযৌক্তিক ডিমের দাম ওঠানামা করায় বেশ বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক খামারিরা। শিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে দরকার আলাদা পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন। এমনটাই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমর যদি সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক পলিসি না নিলে ক্ষুদ্র খামারিরা সমাজে টিকে থাকবে না। শুধু ৭০ হাজার খামারি না, এর সাথে আরও ৭০ লাখ মানুষ জড়িত।’

কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উৎপাদন বাড়াতে সরকার বাজেটে যে সহায়তা দিয়ে থাকে সেটি চলমান রাখতে হবে। সেই সাথে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারজাতকরণেও সরকারকেও ভূমিকা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষি এবং খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, ‘হাওর এলাকার কৃষিকে যেমন সহায়তা দিতে চাই। আবর কোস্টাল একার কৃষিকেও আমার সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিত হওয়া দরকার। যার উৎপাদন আরও বেশি উৎপাদন করা দরকার।’

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষিকে লাভ ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উপকরণের দাম কমানো জরুরি। প্রয়োজনে দরকার ভর্তুকি। আধুনিক যন্ত্রের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে ২০২৪-২৫ অর্থ বাজেটে স্পষ্ট ঘোষণা এবং তার প্রতিফলন দেখতে চান প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ