বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: এবি ব্যাংক ১০৪টি শাখা এবং তিন শতাধিক এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে দেশব্যাপী তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এবি ব্যাংক প্রতিটি সূচকে পজিটিভ অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহিত পদক্ষেপের কারণে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর চলমান করোনার মধ্যেও ভালো অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার গুলশানে এবি ব্যাংকের কার্যালয়ে দ্যা ডেইলী অবজারভারের এ প্রতিনিধির সাথে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানেজিং ডিরেকন্টর তারিক আফজাল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, করোনা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে। সেতুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। কারণ প্রধানমন্ত্রী দেশীয় শিল্প রক্ষায় তাৎক্ষনিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে। ফলে দেশের শিল্প খাতের উৎপাদন তুলনামুলকভাবে কমলেও বন্ধ হয়ে যায়নি, সেইসঙ্গে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেও গতি কমেছিল বটে কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি।
তারিক আফজাল বলেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বুহৎ শিল্পের কাজ সামনে এগিয়ে চলেছে যথা সময়ে প্রণোদনা পাওয়ার কারণে, তেমনি ব্যাংকিং কার্যক্রমও চলেছে, বন্ধ করা হয়নি। ফলে ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহের কাজ চলমান ছিল। কাজের গতি স্লোথ ছিল, কিন্তু বন্ধ না হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি হয়নি, বরং লাভ করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর সময় উপযোগী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন করার ফলে।
তিনি বলেন, এবি ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে যেমন সক্রিয় ছিল, তেমনি মন্দ ঋণ আদায়েও তৎপর ছিল, পাশাপাশি মুনাফা অর্জনের দিকেও ব্যাংক সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। যেকারণে ২০১৮ সালে এবি ব্যাংকের মন্দ ঋণ ছিল ৩৩ শতাংশ। করোনাকালীন সময়ে গ্রাহকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে মন্দ ঋণ কমায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে মন্দ ঋণ ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালে অপারেটিং মুনাফ হয়েছিল ৩৪৩.৯৪ কোটি টাকা আর ২০২১ সাল শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৬৬০.৩৪ কোটি টাকা। যা ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। ক্রেডিট রেটিংয়েও ২০১৮ সালে এবি ব্যাংকের অবস্থান ছিল এ২ আর ২০২১ সাল শেষে তা হয়েছে এএ- । একইভাবে এবি ব্যাংক ২০১৮ সালে ঋণ বিতরণ করেছিল ২২৫৩৯.৮৭ কোটি টাকা; ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০৩৩.৬৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে মোট ডিপোজিট ২৪৭৪৫.১৬ কোটি টাকা ছিল; ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৩৩৫.০৯ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটিং গ্রেড অনুযায়ী এবি ব্যাংকের অবস্থান ছিল ২; ২০২১ সালে তা ১ হয়েছে। ২০১৮ সালে এবি ব্যাংকের প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ১২ টাকা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৫০ টাকা। লোন ডিপোজিট রেশিও ২০১৮ সালে ছিল ০.৯১; ২০২১ সালে তা ০.৮৬ হয়েছে। কষ্ট অব ফান্ড ২০১৮ সালে ছিল ০.০৮; ২০২১ সালে তা হয়েছে ০.০৬।
এক প্রশ্নের জবাবে তারিক আফজাল বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করার নীতি ও কৌশল গ্রহণ করে। তফসিলি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ও কৌশল সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করেছে। আর তা করার ফলে ব্যাংকগুলো লাভের মুখ দেখতে শুরু করে। আস্তে আস্তে ব্যাংকগুলো সামনে এগিয়ে যায় এবং লাভ করতে থাকে; এবি ব্যাংকও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে বলে লাভ করেছে।
তিনি বলেন, এবি ব্যাংক মন্দ ঋণ আদায়ে কঠোর নীতি অনুস্বরণ করেছে। যেকারণে মন্দ ঋণ কমেছে। সেই সঙ্গে বৃহৎ শিল্পে ঋণ প্রদান করা থেকে সরে এসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রদানের দিকে ঝুঁকছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে যে, বৃহৎ একটি শিল্প কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মন্দ ঋণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মন্দ ঋণ বাড়ে; কিন্তু বৃহৎ আকারে মন্দ ঋণ বাড়ে না। তাছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের তুলনায় বেশি তৎপর থাকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝিারি শিল্পে ঋণ প্রদানের দিকে ঝুঁকছে এবি ব্যাংক।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারিক আফজাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রদানের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এবি ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ মেনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রদানের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আর তা করতে গিয়ে আমরা সফল হয়েছি। তাই আমরা এ খাতে ঋণ প্রদানের প্রতি বেশি তৎপরতা চালিয়েছি।
তিনি বলেন, আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ এবং গ্রাহক ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করা হয়েছে। করোনার আগে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকিং সেক্টরে আমানতের সুদ হার এবং গ্রাহক ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করে দেন। এরপরই পৃথিবী ব্যাপী করোনা আঘাত হানে। প্রাথমিক অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সুদ হার নির্ধারণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো চাপে পরলেও পরবর্তীতে সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। তাছাড়া নতুন যেকোনো বিষয় বাস্তবায়নে সমস্যা হয়; কিন্তু পরবর্তীতে সেই সমস্যা আর থাকে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সুদ হার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো চাপে পরলেও পরবর্তীতে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এবং ব্যাংকগুলো সফল হয়েছে।