করোনা মহামারীর পর বাংলাদেশের অর্থনীতি যতটা শক্তিশালী ভাবা হয়েছিল সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। সে কারণে বাংলাদেশ এখন অর্থনীতির আকার নয় প্রাধান্য দিচ্ছে দৃঢ়তায়। বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে চলছে দেশের অর্থনীতি।
চলতি বছর প্রথম চার মাসে উর্ধ্বমূখী মূল্যস্ফীতি। খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপে খেটে খাওয়া মানুষের কপালে ভাঁজ। শক্তিশালী বাজার তৈরিতে আসন্ন বাজেটকে সুক্ষ্ম বিবেচনায় নেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে ভোক্তা। চলতি বছর প্রতিবেশি দেশগুলো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও দেশে মূল্যস্ফীতির মাসিক গড় সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি।
ভারতে বছরের প্রথম চার মাসে মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৫ শতাংশের নীচে। তবে ডলারের বিপরীতে বেশ অবনমন হয়েছে ভারতীয় রুপির।
পাকিস্তানে ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতি ছিল গত এপ্রিলে। বছর শুরুতে ২৮ শতাংশ থেকে তা কমে এসেছে ১৭ শতাংশে। তবে সবচেয়ে অবাক করেছে শ্রীলঙ্কা। মূল্যস্ফীতি ৬.৪ থেকে আরও কমে ১.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এপ্রিলে।
এদিকে বাংলাদেশে জানুয়ারিতে ৯.৮৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে এসেও ছিল ৯.৭৪ শতাংশ। যা কোনভাবেই স্বস্তি দিতে পারেনি ভোক্তাকে। উপরন্তু খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১০.২২ শতাংশ। অথচ বিগত বছরগুলোতে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছিল।
ভোক্তাদের একজন বলেন, ‘আগে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম করলে আমার চলে যেত এখন ৫০০ বা হাজার টাকা ইনকাম করলেও চলছে না। সব কিছুর দাম বেশি।’
আরেকজন বলেন, ‘ঘর ভাড়া বাড়ছে, বাচ্চাদের টিউশন ফি বাড়ছে, আমরা যে বাজারে যাচ্ছি সেখানে দাম বৃদ্ধি।’
এদিকে চলতি অর্থবছরে অর্থনীতির যেসব সূচকে উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে তার মধ্যে অন্যতম রাজস্ব খাত।
অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। মূল্য সংযোজন কর ও আয়করে প্রবৃদ্ধি থাকেও এনবিআরের ভাষ্য, ধনীদের ৮৭ শতাংশই ফাঁকি দিচ্ছে প্রত্যক্ষ কর।
অন্যদিকে ৬২ বিলিয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে থাকলেও এরইমধ্যে রপ্তানি আয় ৪৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ডলার দর বাড়ায় রপ্তানি আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে সেখানে আরও ভালো করা সম্ভব। অর্থনীতির আরেক ভিত রেমিট্যান্সের প্রবাহ এখনো সতেজ রেখেছেন প্রবাসীরা।
তবে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় প্রণোদিত করতে টাকার অবমূল্যায়ন হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন সিপিডি সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘স্থির আয়ের মানুষ তার আয়ের বৃদ্ধি থেকে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ যেগুলো ক্রয় করে তার মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ না সেগুলোর মূল্যস্ফীতি ২২ থেকে ২৩ শতাংশ। আর্থিক খাতের সংস্কার ও রাজস্ব আদায়ে অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুততর করারও পরামর্শ দেন এই গবেষক ।
২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী বাংলাদেশের সামনে রয়েছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। থাকবে না শুল্ক সুবিধা। এছাড়া বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় দেশের কারখানাগুলোকে হতে হবে জলবায়ু বান্ধব, তৈরি করতে হবে দক্ষ জনশক্তি। নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিক অধিকার। তাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটেই থাকতে হবে টেকসই পরিকল্পনা।