রাষ্ট্রপতিকে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। রোববার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক মানববন্ধনে তারা এ আহ্বান জানান।
বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমরা আজকে একটি অবৈধ সরকারের কাছে আবেদন করছি। কারণ কোনো উপায় তো নেই। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। যেখানে চিকিৎসক পরিবার এবং দলের আবেদনকে উপেক্ষা করছে সরকার। সরকার তাদের নিজের মতো চলছে। আইনমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। ৪০১ ধারা নিয়ে তিনি পজিটিভ নেগেটিভ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জেলখানায় ঢুকে বেগম জিয়াকে আবার আবেদন করতে হবে।
খালেদা জিয়ার বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম জিয়া যেখানে আছেন সেখানেই সাবজেল ঘোষণা করা হোক। সেখান থেকেই তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার অনুমতি তিনি দিতে পারেন। পৃথিবীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা তো সহজ হয়ে গেছে। আমাদের ডাক্তাররা যা বলছে ইংল্যান্ডের ডাক্তাররাও তাই বলছে। সমস্যা তো হলো চিকিৎসা। দরকার লজিস্টিকস, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। ম্যাডামের যে অবস্থা এদেশে ট্রিটমেন্ট নেই। তার যে সার্জারি লাগবে সেই সার্জারির ইকুইপমেন্ট কোথায়? আইনমন্ত্রীকে বলতে চাই- এর মধ্যে একটা কাজ করেন আপনি জাহাজে করে একটি হাসপাতাল এ দেশে নিয়ে আসুন।
এই সংসদ সদস্য বলেন, কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার বক্তব্য শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি না নেত্রী বেগম জিয়াকে তিনি মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে চাই- আপনি আপনার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারণ আপনাকে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা দেওয়া আছে।
চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি জায়গায় উপনীত হয়েছে যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন, একেবারে অনুপস্থিত। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যে কথা বলেছেন এর জন্য আজকে সত্যিকার অর্থেই আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই, প্রতিবাদ করার ভাষা নাই। একথা কি সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করে না প্রধানমন্ত্রীর উপরে নির্ভর করছে দেশের বাইরে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া না পাওয়া।
তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী সিনিয়র একজন ল’ ইয়ার। তিনি আইনের যে ব্যাখ্যা দেন সেটা এদেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। হঠাৎ করে তিনি বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সুযোগ দেবেন। আমরা তো বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার দাবি জানাইনি।
হারুন বলেন, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই সরকার এযাবৎকালে ৩০ জনের অধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা মওকুফ করেছে বেআইনিভাবে, আইনের বরখেলাপ করে। খুনের আসামি, ইয়াবা সম্রাট, মানবপাচারকারী, টাকা পাচারকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে অন্যায়ভাবে সরকার জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, আমার চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা। এর ব্যতিক্রম আমরা অন্য কোনো কিছুই মানবো না। এখন আমি আহ্বান জানাবো বেগম খালেদা জিয়ার যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আপনারা আমাদেরকে বাধ্য করবেন না সংসদ থেকে বেরিয়ে যেতে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ও বিএনপির বিরোধীদলীয় হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আপনারা জানেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হয়েছে। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যখন কারাগারে যান তিনি পায়ে হেঁটে গেছেন, কিন্তু গত তিন বছরে তার কী হাল হয়েছে এটা দেশের মানুষ জানে। এর দায় এই সরকারকে নিতে হবে। কারণ গত তিন বছরে তিনি দল, পরিবার এবং নিজের হেফাজতের ছিলেন না। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের হেফাজতে।
তিনি বলেন, আমরা দেখি সামান্য একটু হাঁচি, কাশি, সর্দি চিকিৎসার এমনকি রুটিন চেকআপের জন্য রাষ্ট্রপতি জার্মানি, ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু আমাদের সরকার দলীয় এমপিরা আমাদের শোনায়- ওনার (খালেদা জিয়া) বেস্ট চিকিৎসা নাকি বাংলাদেশে হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি সেরা চিকিৎসাটা হতো তাহলে কেন আমরা দেখি অতি সাধারণ মানুষও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা জন্য ছুটে যাচ্ছে।
রুমিন বলেন, গত তিন বছরে বেগম জিয়ার ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে কোনো প্রকার ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়নি। যদি তিনি তার অসুখের চিকিৎসা করাতে পারতেন, সরকার যদি সেই সুযোগ দিতো তাহলে আজকে তার এই অবস্থা হয় না। বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪০১ ধারায় সরকার যে কোনো ব্যক্তিকে শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দণ্ড মওকুফ করতে পারে কিংবা দণ্ড স্থগিত করতে পারে।
রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকতো, দেশে সুশাসন থাকতো তাহলে কোনো নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন হতো না। বহু আগেই বেগম খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হতেন। জামিনে মুক্ত হতে যে শর্তগুলো প্রয়োজন- সামাজিক অবস্থা, তার বয়স, তার শারীরিক অবস্থা এর যেকোনো একটি বিবেচনায় তিনি জামিন লাভের যোগ্য।