প্রকাশ্যে আসামে গরুর মাংস খাওয়া এবার নিষিদ্ধ হল। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গতকাল বুধবার এই ঘোষণা করলেন। জানালেন, প্রকাশ্যে রাজ্যের কোথাও গোমাংস খাওয়া যাবে না। কোনও হোটেল, রেস্তরাঁ, অনুষ্ঠানবাড়ি বা জনসমক্ষে কোথাও গোমাংস পরিবেশন করা বা খাওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিমন্ত বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আসামের কোনও রেস্তরাঁ, হোটেলে গোমাংস বিক্রি করা যাবে না। কোনও অনুষ্ঠানে বা জনসমক্ষে কোথাও গোমাংস পরিবেশন করা যাবে না রাজ্যে। সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ্যে গোমাংস নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিমন্ত। তাঁর কথায়, “আগে মন্দিরের কাছাকাছি এলাকায় গোমাংস নিষিদ্ধ করেছিলাম আমরা। এবার তার পরিসর বাড়িয়ে গোটা রাজ্যে করলাম। কোথাও গোমাংস খাওয়া যাবে না, অনুষ্ঠান, বাড়ি বা হোটেল-রেস্তরাঁ, কোথাও না।”
হিমন্তর এই ঘোষণার পরই আসামের মন্ত্রী পীযূস হাজারিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেসকে একহাত নেন। লেখেন, ‘কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ করছি, গোমাংস নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান, নইলে পাকিস্তান চলে যান’। ক’দিন আগেই রাজ্যে গোমাংস নিষিদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হিমন্ত। গত রোববার সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, কংগ্রেস যদি লিখিত ভাবে আবেদন জানায়, তাহলে রাজ্যে গোমাংস নিষিদ্ধ করতে প্রস্তুত তিনি।
বিতর্কের সূত্রপাত সদ্য সমাপ্ত উপনির্বাচনকে ঘিরে। রাকিবুল হোসেন-সহ আসাম প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, মুসলিম অধ্যুষিত সামাগুড়িতে গোমাংস বিলি করেই ভোটে জয়ী হয়েছে বিজেপি। সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠলে, গোমাংস নিষিদ্ধ করার ইঙ্গিত দেন হিমন্ত।
এর আগে, ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে Asam Cattle Preservation আইন পাস হয়। সেই আইন অনুযায়ী, হিন্দু মন্দির, বৈষ্ণব মঠ, হিন্দু-জৈন-বৌদ্ধ-শিখ এবং গোমাংস খান না এমন মানুষের আধিক্য যেখানে বেশি, তার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গোমাংস এবং গোমাংসজাত পণ্যের বিক্রিয়, ক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়। গরু পরিবহণেও নিষেধাজ্ঞা বসানো হয়েছিল সেবার।
হিমন্তর এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন All India United Democratic Front-এর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মানুষ কী খাবে, না খাবেন, কী পরবেন, না পরবেন, তা ঠিক করার অধিকার সরকারের নেই। রফিকুলের প্রশ্ন, গোয়া এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপি-র গোমাংস নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা নেই, তাহলে আসামে কেন? এসবকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হিমন্ত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর আসামের বিজেপি সাংসদ দিলীপ সালকিয়া বলেন, “ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এটা। সাধারণ মানুষও এমনটা চাইছিলেন। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টিকে দেখা উচিত নয়, ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান জানানো উচিত। ব্যক্তিগত স্তরে গোমাংস খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তো নেই!”