রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শাহরীন খান রূপা। এ পদে বসেন ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। এর পর পেরিয়ে গেছে টানা ১৪ বছর। এখনও তিনি প্রধান শিক্ষক পদ আঁকড়ে আছেন। সরকারি চাকরিতে তিন বছর পর পর কর্মস্থল বদল হওয়ার কথা। তবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) অজ্ঞাত কারণে তাঁকে বদলি করেনি। আর এই সুযোগে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেপরোয়া ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের গাছ কাটা থেকে শুরু করে নিয়োগ পরীক্ষা– সবখানেই তাঁর বিশেষ ভাগ বরাদ্দ থাকে।
তবে শাহরীন খান রূপার মূল পদ প্রধান শিক্ষক নয়। তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে ক্ষমতার দাপটে প্রধান শিক্ষক পদে বহাল রয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর আস্থাভাজন শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে রেখেছেন তিনি। বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন চাকরি ও নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব টানা ১৩ বছর ধরে দিয়ে রেখেছেন তাঁর আস্থাভাজন শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারকে। অভিযোগ উঠেছে, এসব পরীক্ষার টাকা নয়ছয় করে তিনি ও রাজ্জাক দু’হাতে লুটেছেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি করে চলেছেন রূপা। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিজ বিদ্যালয়ে ফরম পূরণ না করে অন্য বিদ্যালয়ে ফরম পূরণ করার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে আস্থাভাজন শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকই তাঁর সব অনিয়মের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী এর প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে নানা রকমের অত্যাচার ও বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র বদলি করিয়েছেন। অনেক শিক্ষক রূপার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজ থেকেই বদলি বা চাকরি ছেড়েছেন। মাউশিতে তাঁর নিজের লোক রয়েছে জানিয়ে কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে চলেন তিনি।
জানা গেছে, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকদের সম্মানি কম দেন এবং সিংহভাগ নিজে নিয়ে কমিটির শিক্ষকদের মধ্যে বাকিটুকু বণ্টন করেন প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করেও শিক্ষক বা কর্মচারীর ভুয়া নাম সাজিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। সরকারি কর্মকমিশন ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা, বই ও পুরোনো জিনিসপত্র কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই বিক্রি করেছেন শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ও দেওয়ান খাদেমের নেতৃত্বে। এ বছর কোরবানির ঈদের আগে ও পরে কোনো টেন্ডার ছাড়া বিদ্যালয়ের দুটি রেইনট্রি ও চারটি মেহগনি গাছ বিক্রি করে দেন প্রধান শিক্ষক। যার বাজারমূল্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ে কোচিং করানো নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তাঁর মদদে কোচিং বাণিজ্য চলছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শাহরীন খান রূপা বলেন, আমি যদি খারাপ হতাম অভিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্ররা আমার বিরুদ্ধে যেত। পুরোনো জিনিসপত্র ও গাছ বিক্রির যে অভিযোগের কথা বলছেন, তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, একটা পট পরিবর্তনের সময় এখন অনেকে অনেক কিছু বলেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব করাচ্ছে।