যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার হামাস কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এ ছাড়া একই পরিমাণ হামাসকর্মী আহতের দাবি করেছে দেশটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট দাবি করে বলেন, প্রায় চার মাসের যুদ্ধে গাজার দক্ষিণ খান ইউনিসে হামাস সৈন্যদলকে ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ১০ হাজার হামাসকর্মী নিহত এবং একই সংখ্যক আহত হয়েছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খান ইউনিসে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করছি। আমরা রাফাতেও পৌঁছাব এবং আমাদের হুমকি দেওয়া সন্ত্রাসী উপাদানগুলোকে নির্মূল করব।’
এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্তে একটি শহরে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক লোকে দিয়ে পরিপূর্ণ হয়েছে।
পেছনে ফিরে দেখা
ইসরায়েলের সাহায্য না থাকলে হয়তো এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্মই হতো না! ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে ধর্মনিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীদের আন্দোলন, প্রতিবাদের মুখে ডিভাইড এন্ড রুল বাস্তবায়নের জন্যই হামাসের মতো ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরির উদ্যোগ নেয় ইসরায়েল। আর এই সিদ্ধান্তই এখন ইসরায়েলের জন্য কাল হয়েছে।
এটি কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়, বরং বাস্তব সত্য। সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের থেকেই সে সত্যতা পাওয়া যায়।
১৯৮০ এর দশকের শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজাক সেগেভ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, তিনি প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, বামপন্থী এবং ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ পার্টির ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে ফিলিস্তিনি ইসলামী আন্দোলনকে অর্থায়নে সহায়তা করেছিলেন। ইয়াসির আরাফাত নিজেও হামাসকে ‘ইসরায়েলের সৃষ্টি’ বলেই সম্বোধন করতেন।
ইতজাক সেগেভ স্বীকার করেন, ইসরায়েল সরকার আমাকে একটি বাজেট দেয় এবং সামরিক সরকার সে অর্থ মসজিদগুলোতে দিত।
গাজায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা সাবেক ইসরায়েলি ধর্মীয় বিষয়ক কর্মকর্তা আভনার কোহেন বলেন, ‘বড় দুঃখের বিষয় যে হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি।’
২০০৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি আরো জানান, ফিলিস্তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের সমর্থন করে অধিকৃত অঞ্চলে বিভাজন সৃষ্টি ও শাসন প্রতিষ্ঠা না করার জন্য তাদের ঊর্ধ্বতনদের কাছে একটি সরকারি প্রতিবেদনও লিখে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
প্রতিবেদনে তিনি লেখেন, ‘আমাদের ওপর চড়াও হওয়ার আগেই এই দানবকে (হামাস) ভেঙে ফেলা উচিত।’
কিন্তু ইসরায়েলি প্রশাসন তার কথা শোনেনি। যার ফলাফল কয়েক দফা ভোগ করতে হয়েছে ইসরায়েলিদের। প্রথমে ইসরায়েলিরা হামাস এবং তার পূর্বসূরী মুসলিম ব্রাদারহুড গঠনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ইসলামিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তারপর ইসরায়েলিরা কৌশল পরিবর্তন করে এবং এক পর্যায়ে বোমাবর্ষণ করে, অবরোধ দিয়ে তাদের দুর্বল করার চেষ্টা করে।
গত ১৫ বছরেই ইসরায়েলকে হামাসের সাথে তিনবার (২০০৯, ২০১২ এবং ২০১৪) যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে। পরিণতিতে গাজায় প্রায় ২,৫০০ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আর যে ধর্মনিরপেক্ষ ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে বিভাজিত করতে হামাসের সৃষ্টি, তারাই ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়েছে।
১৯৮০ এর দশকে গাজায় অবস্থিত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাবেক আরব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড হাচাম বলেন, যখন আমি অতীতের দিকে ফিরে তাকাই তখন মনে হয় যে, আমরা একটি ভুল করেছি। কিন্তু তখন কেউ সম্ভাব্য পরিণতি ভেবে দেখেনি।