বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করে, ওই অথরিটির মাধ্যমেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজিষ্ট্রেশন প্রদান এবং প্রতারণা বন্ধে কঠোর ভাবে ডিজিটাল বাণিজ্য মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তার সভাপতিত্বে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিক দেওয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এছাড়াও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজির আহমেদ, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মফিজুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, র্যারের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কমকর্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টিপু মুনশি বলেন, ই-কমার্স বন্ধ না করে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য একটি রেগুলারেটরি অথরিটি গঠন করা হবে। সারাবিশ্বে ই-কমার্স চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে এ ব্যবসার সাথে লাখ লাখ মানুষ জড়িত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাণিজ্য পরিচালিত হবে। তবে এখাতে প্রতারণার সুযোগ বন্ধ করা হবে।
তিনি বলেন, ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা হবে। এখান থেকে ই-কমার্সের জন্য রেজিষ্ট্রেশন প্রদান এবং কঠোরভাবে ডিজিটাল বাণিজ্য মনিটরিং করা হবে। করোনাকালে ই-কমার্স সুনাম অর্জন করেছে, মানুষ উপকৃত হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অসৎ ব্যবসা ও প্রতারনার কারনে সকল ই- কমার্স বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না।
“যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের প্রতারনার সুযোগ না পায়, সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা কার্যকর হবার পর প্রতারনা বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যে গ্রাহকদের প্রতারিত করেছে, ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সে বিষয়ে আরও কি করা যায়, সরকার তা পরিক্ষী-নিরীক্ষা করে দেখছে,” বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ই-কমার্সে অনেক মানুষ প্রতারিত হবার অভিযোগ আছে। ই-কমার্স পরিচালনার জন্য একটি আইন তৈরী করা প্রয়োজন। দেশের কোন মানুষ যাতে ডিজিটাল বাণিজ্যে প্রতারিত না হন, সে জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এজন্য একটি প্লাটফর্ম গঠন করা দরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ই-কমার্স বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। আইনের আওতায় এতে ই-কমার্সকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। যাতে করে কেউ প্রতারনা করতে না পারে। মানুষ কম দামে পণ্য পেতে চাইবে, এটাই বাস্তবতা। ই-কমার্স ব্যবসার জন্য জামানত রাখার ব্যবস্থা করা যায়। ব্যবসা যত বড় হবে জামানত তত বেশি হবে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। মানুষকে প্রতারনার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। মানুষ যাতে টাকা ফেরত পায় সেজন্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হবার সাথে সাথে ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ যাতে প্রতারিত না হন, সেজন্য আইন করা দরকার। এ ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা যেতে পারে। গুটিকয়েক প্রতারনাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ই-কমার্স বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে প্রতারনার সুযোগ কমে আসবে।