আগামী সপ্তাহে ফের চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশন। সেই সঙ্গে আসছে শুক্রবারও মেট্রো চালু রাখার ঘোষণা। তবে এখনই খুলছে না মিরপুর-১০ স্টেশন। মেট্রোরেলের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছেন তারা। মেরামতের নামে যাতে আর অপ্রয়োজনীয় খরচ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার সুপারিশ করেছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। বলা হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন এক বছরের আগে চালু করা যাবে না। মেরামতে খরচ পড়বে শত কোটি টাকা। কিন্তু এক বছর নয়, চালু হচ্ছে মোটামুটি দেড় মাসের মাথায়। খরচও অত বেশি না।
জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলাকারীদের হামলায় রাজধানীর মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনের কিছু ক্ষতি হয়। ওই সময়ে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গত ১৯ জুলাই এ দুটি স্টেশন পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দু’টি সংস্কার করে পুনরায় সচল করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। এতে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে তখন জানানো হয়।
তবে জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপরই স্টেশন দুটির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কমিটি গঠন করা হয়।
ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলায় মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে টিকেট কাটার ভেন্ডিং মেশিন থেকে শুরু করে ব্যবহৃত কম্পিউটার, অফিস কক্ষ, দরজা-জানালার কাচ, ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কার্ড, টিকেট পাঞ্চ করার দরজা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ইত্যাদি ক্ষতি হয়েছে।
বস্তুত কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন। আর এ কারণে প্রায় মাসখানেক বন্ধ রাখা হয়েছিল পুরো মেট্রোরেল। ৩৫ দিনের মাথায় পুনরায় মেট্রো চলাচল শুরু করলেও বন্ধই থাকে কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন। তখন থেকেই প্রশ্ন ছিল, কতদিন মেট্রো সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে এই দুই এলাকার মানুষকে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমপি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, দুটি স্টেশনের মধ্যে কাজীপাড়া স্টেশনটি তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে। ফলে সেটি সংস্কারকাজ শেষ করে দ্রুত চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন চালু করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে।
গত ১৯ জুলাইয়ের হামলায় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনে অবকাঠামোগত যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পূরণে প্রায় একশ কোটি টাকা খরচ হবে বলে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে জানিয়েছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর এখন জানা যাচ্ছে যে, স্টেশনটি সংস্কারে এক কোটি টাকাও খরচ হচ্ছে না।
খরচের বিষয়ে মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যে হিসাব করেছি, তাতে মনে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত দুটো স্টেশন মিলিয়ে সংস্কার কাজ করতে ১৩৮ কোটি টাকার বেশি লাগবে না।
মেট্রোর নবনিযুক্ত এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, মূলত হালকা মেরামত ও অন্যান্য স্টেশন থেকে র্যাশনিং করে যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করায় এই স্টেশনটি পুনরায় এত দ্রুত চালু করা সম্ভব হচ্ছে। এর জন্য কারিগরি সব পরীক্ষাই এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু একটি তারিখের, যেটার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনও করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান, উদ্বোধনের তারিখটি পেলে ঐদিনই শুক্রবার মেট্রো চালু করার ঘোষণা দেয়ারও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্ম আবদুর রউফ বলেন, ‘আমরা অলমোস্ট রেডি। আমরা শুক্রবারেও অপারেশন এবং কাজীপাড়া স্টেশন চালু করতে প্রস্তুত আছি। এবং শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। আমাদের অথোরিটির নলেজ আছে, এবং আজকেই হয়তো ওনারা একটা রেজাল্ট দেবেন আশা করছি।’
কাজীপাড়া স্টেশন চালু হলেও সহসাই চালু করা যাচ্ছে না মিরপুর ১০ স্টেশন। কারণ এখানে কিছু যন্ত্রাংশ এত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, নতুন করে সংযোজন করতে হবে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেরামতের নামে যাতে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘যে দু’টি সস্টেশনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার ধারণা, আমার লোকাল যে কারিগরি সক্ষমতা আছে, লোকাল অনেক ওয়ার্কশপ আছে, সেখান থেকেও এই যন্ত্রপাতি সংস্কার করে চালু করা সম্ভব। এক বছরের যে কথা বলা হয়েছে সেটা আসলে অতিরঞ্জিত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এবং ব্যয়ের যে কথাটা বলা হয়েছে এটাও অনেকটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যে টিকিট মেশিন বলা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত, এটার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করেও কিন্তু এটা চালু করা যেতে পারে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করা না গেলে, অন্য যে কোনো উপায়ে চালু করতে হবে।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, মেট্রোকে যুগোপযোগী করতে এটিকে বিচ্ছিন্ন একটি করিডর হিসেবে নয়, একটি নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে নিরবচ্ছিন্ন যাত্রীসেবা নিশ্চিতের।