মৌসুমের শুরু ও শেষের সন্ধিক্ষণ এবং টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে এখন চালের দাম কিছুটা বাড়তি বলে মন্তব্য করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশের বাজারগুলোতে শিগগিরই চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এখন মৌসুমের শেষ ও শুরুর সন্ধিক্ষণ। মিলওয়ালাদের ধান এখনও চাতালে। তারা উৎপাদনে যায়নি। এছাড়া বৃষ্টির জন্য ধান শুকাতে ২ দিনের বদলে ৫-৭ দিন লাগছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। খুব শিগগিরই দাম সহনীয় হবে।
বুধবার (১৮ মে) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশে খাদ্য ঘাটতির সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, চালের জোগান কম নেই। ভারত প্রতিবেশী দেশের জন্য গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আমরা চিঠি দিয়েছি। গম নিয়ে চিন্তা নেই।
বোরো মৌসুম চললেও চালের দাম বাড়ছে- দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতিনির্ভর বাংলাদেশ, এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। যে সময়টা যাচ্ছে সেটাকে সন্ধিক্ষণ বলা যেতে পারে। পুরোনো চালের শেষ সময় নতুন চালের আগমন। এই সন্ধিক্ষণে মিলাররা বাজার থেকে ধান কেনায় ব্যস্ত, উৎপাদনে তারা এখনও সঠিকভাবে যায়নি। তারপর আমরা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের মনিটরিং খুব শক্ত। আশাকরি চালের দাম সহনশীল পর্যায়ে চলে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘অটোরাইস মিল ছাড়া হাস্কিং চাতাল যেগুলো রয়েছে, এরা তখন বাজারটা কন্ট্রোলে রাখে। দুই গাড়ি কেনে দুই গাড়ি ছাড়ে। অটোরাইস মিলগুলো মজুত সম্পন্ন করে তারা এখনো উৎপাদনে যায়নি। হাস্কিং চাতালে সিদ্ধ করে শুকাতে দু-তিনদিন লাগে, সেটা বৃষ্টির কারণে তিন-চারদিন লেগে যাচ্ছে। সেই কারণে অতিবৃষ্টি হলে কিন্তু একটু দাম বাড়ে।’
“কেউ চালের দাম যদি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করত, তবে… আমরা যে চালটা কিনছি ১১ লাখ টন আমাদের কেনার ঘোষণা আছে। ১৬ মে পর্যন্ত ছিল চুক্তির শেষ তারিখ, এ সময়ের মধ্যে ১০.৭৬ লাখ টনের মতো কেনার চুক্তি হয়ে গেছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ সংগ্রহের জন্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সেই দিক দিয়ে মনে করছি আমরা সফল আছি,’ বলেন তিনি।
‘চালের জোগান কম নেই। কোনোভাবেই দেশে খাদ্য ঘাটতির সম্ভাবনা নেই,’জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ফায়দা লোটার জন্য, রাজনীতির জন্য বক্তব্য দেয় সেটা হলো ভিন্ন কথা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সিলেটে গিয়ে বলেছেন, সরকারের পরিকল্পনার অভাবে প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে। তার একথা সত্য নয়। উনি ওই কথা বলেননি, এখানে কৃষক রাস্তার অভাবে কিংবা বহন করার অভাবে তারা বিক্রি করতে পারছে না, বাজারের দাম কম। তাদের সময় তো হাওরে কোনো আবাদই হতো না। তাদের সময় তো হাওরে ধানের চাষই হতো না।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর হাওরে চাষ শুরু হয়। এটা হলো বোনাস ফসল। প্রধানমন্ত্রী হাওরের ফসল নিয়ে চিন্তা করার কারণে যে ফসল টা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা বাড়তি ফসল। সেটা থেকে বলতে পারি আমাদের পরিকল্পনার অভাব নেই, হাওরকে হাওরের মতোই রাখতে হবে।’
হাওরে আহামরি ধান নষ্ট হয়নি মন্তব্য করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, হাওরে ২ থেকে ৩ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে। তবে এবার অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে ধান আবাদ হয়েছে।
সাধন মজুমদার বলেন, ‘ভারতীয় হাইকমিশন একটি প্রেস কনফারেন্স করেছে, তারা সেই প্রেস কনফারেন্সের কপি আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। তারা বলেছে, প্রতিবেশী দেশের জন্য গম আমদানিতে কোনো অসুবিধা নেই। সেটার আলোকে আমরা টেন্ডারও করে যাচ্ছি। আগামী ২৩ ও ২৯ তারিখে আমাদের টেন্ডার আছে। তাদের ঘোষণার পর জি-টু-জি (সরকার থেকে সরকার) প্রস্তাবও পেয়েছি আমরা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারিভাবে গম নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। আমরা বলেছি বেসরকারিভাবে যারা আমদানি করে তাদের কী হবে? তারা বলেছে তাদেরও প্রবলেম হবে না। যদি মন্ত্রণালয় লেখে তবে তারাও পারবে। অনেকেই ভারতীয় গম কিনে রেখেছে। এলসি হয়তো করেনি। সেগুলো তারা সরকারের অনুমতি নিয়ে আনবে।’
‘এছাড়া আমরা অন্যান্য উৎসও খুঁজছি। বুলগেরিয়ার সঙ্গে আমাদের এমওইউ হয়েছে। তাদের সঙ্গ একটা মিটিংয়েও আমরা বসবো। কোনো অসুবিধা হবে না’ বলেন তিনি।
এ সময় খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম উপস্থিত ছিলেন।