নাটোরের গুরুদাসপুরে মো. মামুন হোসেন (২২) নামে এক ছাত্রকে বিয়ে করা সেই শিক্ষিকা খাইরুন নাহারের (৪০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় এক ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহটি উদ্বার করা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খাইরুন নাহারের স্বামী মামুনকে আটক করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শিক্ষিকা ও ছাত্রের প্রেম কাহিনী ছড়িয়ে পরলে দুজনই বিষয়টিকে পজিটিভ নিয়েছিলেন। কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে মানসিকচাপ সৃষ্টি হয়। মানসিকচাপের কারণেই এই আত্মহত্যা কিনা তা তদন্ত করে দেখছি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় নাটোর সিটি কলেজের শিক্ষক শহিদুল হক সরকার বলেন, আমাদের সমাজে বয়সের উঁচু-নিচু পার্থক্যের বিয়ে অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। যদিও বিয়েটি বৈধ ছিল তবুও সামাজিকভাবে এবং ওই শিক্ষিকার সহকর্মীদের দ্বারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছিলেন। নিরবচ্ছিন্ন বিভীষণ থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন বলে এই শিক্ষক মনে করেন।
স্থানীয় এক অধিবাসী আব্দুল মালেক খন্দকার জানান, বৈধভাবে সামাজিকভাবে বিয়ে করার পরেও এই দম্পতি সামাজিক ঝড়ের শিকার হয়েছেন। ফেসবুক এবং গণমাধ্যমে তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন হয়তো এই দম্পতি। বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমগুলোর মন্তব্যে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বাজে যে কমেন্টগুলো করছিল এবং তাদেরকে নিয়ে নানা ধরনের লেখালেখি করেছে এবং তাদের যে সমস্ত দর্শকদের কমেন্টসে হয়তো বিব্রত হয়েছিলেন তারা। এ বিষয়ে সুস্থ তদন্ত দাবি করেন তিনি।
নিহত শিক্ষিকা খাইরুন নাহার যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়ির দারোয়ান জানান, শিক্ষিকার স্বামী মামুন রাত ১১টায় বাসায় ফিরে আসেন, আবার রাত আড়াইটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে। তারপর ভোর ৬টার দিকে বাড়িতে ফিরে তিনি ঘরে চলে যান। তার কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এসে দারোয়ানকে ডেকে বলেন তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। তারপর দারোয়ান বাড়ির মালিক ও পুলিশে খবর দেন।
মোছা. খাইরুন নাহার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ছয় মাস আগে তিনি তার ছাত্র মামুনকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের বিয়ের খবর জানাজানি হলে তা প্রচুর আলোচনা-সমালোচনার জন্য দেয়।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ২০২১ সালের ২৪ জুন খাইরুন এবং মামুনের পরিচয় হয়। তারপর গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর সুখের সংসার পাতেন তারা। সে সময় এক বক্তব্যে মামুন বলেছিলেন, ‘মন্তব্য কখনও গন্তব্য ঠেকাতে পারে না।’ কথাটি ভাইরাল হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘পাছে লোকে কিছু বলে আর কে কি বললো সেগুলো মাথায় না নিয়ে নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নিয়ে জীবন শুরু করেছি। সকলের কাছে দোয়া চাই।’
খাইরুন নাহার জানিয়েছিলেন, ‘প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ওই সময় ফেসবুকে পরিচয় হয় মামুনের সঙ্গে। মামুন আমার খারাপ সময় পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছে এবং নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। পরে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ বলেন, ‘সকালে বাসার ভিতরে মরদেহ পরে থাকতে দেখে পাশের বাসার লোকজন খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সদর থানায় নিয়ে যায়। মৃতদেহের সুরতহাল করার পরে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা লাশের ময়না তদন্তের পর জানা যাবে।’