বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:২৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার দেশের নাম ও সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার সরকারের নেই: জাসদ শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন রোনালদোকে ধরে রাখতে ‘অবিশ্বাস্য’ প্রস্তাব আল নাসরের গাজায় অস্ত্রবিরতির কৃতিত্বের দাবি বাইডেনের ক্রিকেট বোর্ডে স্বৈরাচারী প্রভাব, সমাধানের আহ্বান আমিনুল হকের ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া গণতান্ত্রিক দেশ গড়া সম্ভব নয়’ দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত নারীর মৃত্যু কোনো ভোটই রাতে হবে না: ইসি মাছউদ বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বদলীয় সভায় যোগ দিচ্ছেন সালাউদ্দিন আহমেদ ‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব শিক্ষার্থী বই পাবে’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিন্দা ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐক্যই মূল চ্যালেঞ্জ

জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের আভাস

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক
আপডেট : আগস্ট ১৮, ২০২২

সরকারের শেষ সময়ে এসে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব পদের মধ্যে কর্মরত অনেকের চাকরির বয়স শেষ এবং চুক্তির মেয়াদ শেষসহ নানা কারণে রদবদলের এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব পদের মধ্যে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ও পুলিশ প্রধানের পদ।

প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদল নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে কে আসছেন, তা নিয়ে সচিবালয়ে কর্মকর্তারা নানা হিসাব মেলাচ্ছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদও ফাঁকা হচ্ছে। পরবর্তী জনপ্রশাসনসচিব পদের বিপরীতে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হচ্ছে। এই পদে নতুন কেউ আসছেন নাকি বর্তমান আইজিপি থেকে যাচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রশাসনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসনে রদবদল রুটিন কাজ হলেও আগামী বছরের শেষে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, তাই প্রশাসনের শীর্ষ পদে কারা থাকছেন, তা নিয়ে এবার আলোচনা কিছুটা বেশি। সরকারের মধ্যেও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক পদে বর্তমান কর্মরত সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে অক্টোবরে। তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ আর বাড়ছে না বলে অনেকের ধারণা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। তিনি বর্তমানে দুই বছরের জন্য মুখ্য সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। পরবর্তী তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে নভেম্বরে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবেন এমনটা শোনা যাচ্ছে। যদিও মুখ্য সচিব পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ ডিসেম্বর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছেন।

শূন্য হতে যাওয়া মুখ্য সচিব পদে কে নিয়োগ পেতে পারেন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। মুখ্য সচিব পদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। একই পদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নাম শোনা যাচ্ছে। দুজনের মধ্যে কবির বিন আনোয়ার জ্যেষ্ঠ। তিনি বিসিএস ৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। অন্যদিকে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া নবম ব্যাচের কর্মকর্তা।

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস ১) মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এরআগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন। বিসিএস ১৩ ব্যাচের কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন এরআগে ঢাকার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ আছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। প্রথমে এক বছর ও পরে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চাকরিজীবনে তাঁর পরিচ্ছন্ন ইমেজ বিবেচনায় নেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে বর্তমান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। বিসিএস ৮৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব আমিনুল ইসলামের নামও আলোচনায় আছে। তবে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে আরেকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সচিবালয় কেন্দ্রিক সূত্রগুলো। খন্দকার আনোয়ার ১৯৮২ সালের বিসিএস বিশেষ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আলী আজমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২ নভেম্বর। সাধারণত, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের মেয়াদ বাড়ানো হয় না। শোনা যাচ্ছে তাঁকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) তিন বছরের জন্য নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এ পদটি খালি হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। বিডার বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সেপ্টেম্বরে বিদায় নিচ্ছেন।

বর্তমান জনপ্রশাসনসচিবকে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্যও করা হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। এর আগের জনপ্রশাসনসচিব শেখ ইউসুফ হারুনকে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। সাবেক জনপ্রশাসনসচিব ফয়েজ আহম্মদকে পিএসসির সদস্য করা হয়।

সে ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। যিনি বিসিএস নবম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।

আলোচনায় থাকা অন্যরা হলেন, দশম ব্যাচের কর্মকর্তা ভূমিসচিব মোস্তাফিজুর রহমান, ধর্মসচিব কাজী এনামুল হাসান এবং একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।

এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, প্রশাসনে রদবদল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সরকার যেখানে দায়িত্ব দেবে, সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা হবে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেশ কয়েকজন সচিব বিদায় নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, যুব ও ক্রীড়াসচিব মেজবাহ উদ্দিন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব খলিলুর রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী। এসব পদে নতুন কারা আসছেন, তা নিয়েও আলোচনা চলছে প্রশাসনে।

এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসের শেষে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, সে আলোচনা চলছে গত কয়েক মাস ধরে। কিন্তু নির্বাচনের সময় তাঁকে আইজিপি পদে রাখতে হলে মেয়াদ বাড়াতে হবে দুই বছর। দেশে পুলিশপ্রধানের মেয়াদ বাড়ানোর নজির রয়েছে, তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা আছে।

অন্যদিকে বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ না বাড়লে কে হবেন পরবর্তী পুলিশ প্রধান, তা নিয়েও নানামুখী আলোচনা আছে বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে। জ্যেষ্ঠতার বিবেচনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিনের নাম আলোচনায় আছে।

তবে এই দুই কর্মকর্তা আগামী নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়ার সময় চলে আসবে। এই অবস্থায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলামের নামও আলোচিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার পদটিও শূন্য হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বর্তমান কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের গত বছরের ৩০ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আগামী ৩০ অক্টোবর। ডিএমপির ৩৬তম কমিশনার হিসেবে নেতৃত্বে কে আসছেন তা নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ডিএমপি কমিশনারের পদটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদগুলোর মধ্যে একটি। এরই মধ্যে কমিশনার হওয়ার দৌড়ে দুজনের এগিয়ে থাকার জোর গুঞ্জন রয়েছে।

বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ডেভেলপমেন্ট) হিসেবে কর্মরত মো. আতিকুল ইসলাম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ (অতিরিক্ত আইজিপি) প্রধান মাহবুবুর রহমান এবং ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তিনি ডিএমপি কমিশনার হওয়ার আলোচনা রয়েছেন।

তবে আতিকুল ইসলামের নাম আইজিপি পদের জন্যও আলোচনায় রয়েছে। তার সঙ্গে আলোচনায় আছেন র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম। যদিও তিনি আগামী বছরের জানুয়ারিতে স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ