মধ্যপ্রাচ্যে সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রত্যাশা ছিলো ইরানবিরোধী জোট ‘আরব ন্যাটো’ গঠনের। পশ্চিমা গণমাধ্যম একথা ফলাও করে প্রচারও করেছিল। কিন্তু কয়েকটি আরব দেশের বিরোধিতার মুখে সে ধরনের কোনো জোট গঠনের প্রস্তাব উত্থাপনই করা হয়নি সম্মেলনে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, জেদ্দায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে ‘আরব ন্যাটো’ গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়নি। উল্টো তিনি যে তথ্য দিলেন তাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আশা ভঙ্গ হয়েছে। দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম সৌদি গেজেট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান-এর বরাতে জানিয়েছে, রিয়াদ তেহরানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, জেদ্দা সম্মেলন তো দূরের কথা এর আগেও কখনও ইসরাইলের সঙ্গে সামরিক বা প্রযুক্তিগত সহযোগিতার আগ্রহ দেখায়নি সৌদি আরব। আরব ন্যাটো নামের কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমি জানি না এই নামটি কোথা থেকে এসেছে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার এক বক্তব্যে বলেছেন, সৌদি আরব ইরানের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছে এবং রিয়াদ তেহরানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। ইরানের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ ইতিবাচক গতিতে অগ্রসর হলেও এখনও চূড়ান্ত ফল আসেনি। তবে শিগগিরই এ ব্যাপারে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কূটনীতিকে তিনি সর্বোৎকৃষ্ট ও একমাত্র পথ বলেও মন্তব্য করেন।
জেদ্দায় এই সম্মেলনের পেছনে বাইডেনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলকে একীভূত করা এবং ইরানের বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের যৌথ পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা। কিন্তু এবারের যাত্রায় সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতিতে শনিবার বিকেলে সৌদি আরব, ইরাক, জর্দান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত এবং ওমানের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। তবে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন। আরব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি নিযুক্ত থাকবে এবং এখানে অন্য বিশ্বশক্তিকে প্রভাব বিস্তার করতে দেবে না। ‘আমরা একসঙ্গে পথ চলব। চীন, রাশিয়া বা ইরানকে পূরণের জন্য কোনো শূন্যতা রাখব না।’
বিবিসি জানিয়েছে, সৌদি আরবে বাইডেনের এই সফর নিয়ে তার দেশে বিতর্ক রয়েছে। তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরেই একটি অংশ প্রচণ্ড নাখোশ। তাদের কথা – প্রেসিডেন্ট তার নীতি-নৈতিকতার সাথে আপোষ করলেন। সৌদি আরব আগাগোড়া মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রধান একটি মিত্র দেশ। অনেক দিন ধরেই আমেরিকার নতুন যে কোন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নিয়ে প্রথম যেসব দেশে যান তার একটি সৌদি আরব। তাহলে এখন কেন এই বিতর্ক? কারণ, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে-পরে তার কথা, অঙ্গীকারের সাথে মি. বাইডেনের এই সফরের কোনো সামঞ্জস্য নেই।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে আমেরিকার বহু মানুষের মত জো বাইডেনও ক্ষুব্ধ। এরপর সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডে তিনি যুবরাজ সালমান এবং সৌদি রাজপরিবারের ওপর এতটাই নাখোশ হয়েছিলেন যে নির্বাচনী প্রচারণায় ঘোষণা দেন ক্ষমতায় গেলে তিনি এই সৌদি শাসকদের ‘একঘরে’ করে ছাড়বেন।
বিবিসি আরো জানায়, আমেরিকা দশকের পর দশক ধরে প্রধানত জ্বালানি তেলের স্বার্থে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছে। কিন্তু বাইডেন ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করেন বাইরের যে কোনো দেশের সাথে তার সরকারের সম্পর্কের ভিত্তি হবে মানবাধিকার। এরপর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়েও তিনি সৌদি যুবরাজ সালমানের সাথে দেখা করতে বা কথা বলতে অস্বীকার করেন। সৌদি যুবরাজ তার সাথে কথা বলতে কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সৌদি আরবের কাছে নূতন অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেন বাইডেন।
সৌদি আরবে সফরের খবর নিশ্চিত হওয়ার পরও অর্থাৎ গত মাসেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন যুবরাজ সালমানের সাথে তার কোনো কথা হবেনা। কিন্তু পরে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় দুজনের মধ্যে জেদ্দায় কথা হবে। সেটাই সত্য হলো। যুবরাজ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুজনে একান্ত বৈঠক করলেন।