বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: মাহমুদুল হাসান জয়ের ১৩৭ রানে ভর করে সাউদ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশটির ডারবানে চলমান ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৯৮ রান সংগ্রহ করেছে। এতে টেস্ট ম্যাচটিতে বাংলাদেশ সাউদ আফ্রিকার চেয়ে ৬৯ রানে পিছিয়ে ছিল।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে দারুণ ব্যাট করা লিটন দাস দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় বলেই স্টাম্প হারিয়ে বসেছেন। ভুল–বোঝাবুঝিতে ইয়াসির আলী খুইয়েছেন নিজের উইকেট। অন্য প্রান্তে অবিচল মাহমুদুল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শতকের কীর্তি গড়ে অবশ্য আর নিজেকে আটকাতে পারেননি, লাফ দিয়ে আকাশে মুষ্টি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। সঙ্গী মিরাজ তাই মনে করিয়ে দিয়েছেন, এখনো বহু পথ বাকি। নতুন করেই আবার শুরু করতে হবে লড়াই।
৭ উইকেটে ২৫৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ সেশনে লড়াই সেভাবে জমেনি। ২৯৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া মাহমুদুল করেছেন ১৩৭ রান।
অষ্টম উইকেট জুটি তখন মাত্র ১৯ হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের চেয়ে বাংলাদেশ তখনো পিছিয়ে ১৩২ রানে। এমন অবস্থায় দুই দলের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনা, যত অসম্ভবই মনে হোক না কেন, লিড এনে দেওয়ার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে মাহমুদুলকে যে ইনিংস টেনে নিয়ে যেতেই হতো। তখন পর্যন্ত ২৬৯ বল খেলা মাহমুদুল সেটা জানেন না, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। অন্তত ডারবানে যেভাবে খেলছেন, তাতে তেমন সন্দেহ জাগার কোনো সুযোগ নেই। তবু মিরাজ কোনো ঝুঁকি নেননি। সঙ্গীর উদ্যাপন শেষ হতেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, এখনো অনেক কাজ বাকি।
প্রথম সেশনে ৮৫ রান তুলে মাত্র ১ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সে উইকেটও তাসকিন আহমেদের, তাই তৃতীয় দিনের শুরুটা পুরোপুরি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় সেশনের খেলা শুরু হতে না হতেই ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ।
লিজাড উইলিয়ামসের লেংথে পড়া বল ভেতরে ঢুকছিল। মাত্রই বিরতি থেকে ফেরা লিটনের (৪১) ব্যাট ও প্যাডের মাঝের শূন্যস্থান পূরণ হলো না। প্রথমে ব্যাট, তারপর প্যাডের স্পর্শ নিয়ে স্টাম্প ভেঙে তুষ্ট হলো উইলিয়ামসের বল। ভাঙল ৮২ রানের জুটি।
ইয়াসির চনমনে শুরু করেছিলেন। তাঁর ইতিবাচক ব্যাটিং রান তোলার গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ইনিংসজুড়েই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি দেখা গেছে। ফিল্ডারদের ব্যর্থতা বারবার বাঁচিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ৮৯তম ওভারের প্রথম বল লেগ সাইডে খেলে দৌড় দিয়েছিলেন মাহমুদুল। প্রথমে দুই রানের জন্যই দৌড় দিয়েছিলেন দুজন। কিন্তু দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড় শুরু করেই মাহমুদুল বুঝেছেন, তা সম্ভব নয়। জোরে না বললেও ইয়াসিরের কানে যায়নি তা, দৌড়াতে দৌড়াতে অন্য প্রান্তে চলে এসেছেন। রানআউট হয়ে ফিরে গেছেন ইয়াসির (২২)।
এ নিয়ে হতাশা দেখা গেছে মাহমুদুলের শরীরী ভাষায়। কিন্তু সেটা ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলতে দেননি। মধ্যাহ্নবিরতির আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়া মাহমুদুল তখন ছিলেন ৯১ রানে। শতকের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি ৯ রান এই ওপেনার তুলে নিয়েছেন পরের ২৩ বলে। অন্যদিকে মিরাজও চুপ ছিলেন না, মেরেছেন একটি ছক্কা।
এরপর ‘আবার নতুন করে’ পথ চলছেন মাহমুদুল ও মিরাজ। তবে সে পথ চলায় মিরাজ মাঝে দুই ওভার একটু আগ্রাসী খেলে চার বলের মধ্যে তিনটি চার মেরেছেন। লিজাডের বলে মারা টানা দুই চারের পরেরটি স্লিপে যে কারও হাতেই যেতে পারত। সৌভাগ্যবান মিরাজের হুঁশ ফিরেছে এরপর। রক্ষণের খোলসে ঢুকেছেন মিরাজও। সেশনের শেষ ৫ ওভারে তাই এসেছে ৫ রান।