বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর ১ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে ৯৬ টাকায় প্রতি ডলার বিক্রি করা হচ্ছিল। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির এই দরকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার সেলিং রেট’। ডলারের দাম ১ টাকা বাড়ানোর ফলে ‘টাকার অবমূল্যায়ন’ হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন বলছে এটা বাজারের সঙ্গে ‘এডজাস্টমেন্ট’ করা হয়েছে।
যদিও ডলারের বিপরীতের টাকার এই নতুন বিনিময় হার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ওয়েবসাইটে এখনো প্রকাশ করেনি।
আন্তঃব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত দর অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট’। এই রেটেই অর্থাৎ ৯৭ টাকা দরে বুধবার রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৮ বার ডলারের দাম বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর ডলারের দর ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৬ টাকা করা হয়েছিল। এক মাস ধরে এই দামেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তঃব্যাংক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখতেই বুধবার রিজার্ভ থেকে এক টাকা দর বাড়িয়ে ৯৭ টাকা দরে ৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির জন্য যে দর নির্ধারণ করে তাকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট’ বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকিং খাতে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। আর চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের এপর্যন্ত আড়াই মাসেরও কম সময়ে বিক্রি করা হয়েছে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতো সেটিকে ‘ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা আন্তঃব্যাংক লেনদেন হার- নামে অভিহিত করা হতো। তবে চলমান ডলার সংকটের কারণে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের চাহিদা ও যোগানের সাথে তাল মিলিয়ে ডলারের দর নির্ধারিত না হওয়ায় ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলার লেনদেন বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কয়েক বার টাকার অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের বাজার নিস্ক্রিয়ই থাকে।
চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছিল ৯৫ টাকা দরে।
ওইদিন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাজারের স্থিতিশীলতা আনতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) এক সভায় রফতানি আয় নগদায়নে ডলারের দাম ৯৯ টাকা ও দেশে আসা রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নির্ধারিত ৯৫ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচার বাধ্যবাধকতাটি তুলে নেয়। তারপর ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা অভিন্ন হার নির্ধারণ করলে দীর্ঘ পাঁচ মাস নিস্ক্রিয় থাকার পর ফের সচল হয় আন্তঃব্যাংক ফরেক্স বাজার। ওই একই দিনে, ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির হারের পরিবর্তে আন্তঃব্যাংক ডলার রেট হিসাবে ভাসমান হার প্রকাশ করা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী গত ১২ অক্টোবর ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে সর্বনিম্ন ক্রয় ১০৪ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ বিক্রয় ১০৫ টাকা ৬৬ পয়সা দরে ডলার কেনাবেচা করছে। এর আগে ১১ অক্টোবর ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে সর্বনিম্ন ক্রয় ১০০ টাকা ১০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ বিক্রয় ১০৫ টাকা দরে ডলার কেনাবেচা করে।
চলতি মাসের শুরুতে এই দর ছিলে সর্বনিম্ন ক্রয় ১০৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ বিক্রয় ১০৫ টাকা ২০ পয়সা দরে ডলার কেনাবেচা করছে।
এই দর সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বলছে, এটি আন্তব্যাংক লেনদেন যা বাফেদা নির্ধারিত দর। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বাজার দরের সঙ্গে মিলিয়ে ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট চালুর কথা বললেও তারা নিজেরা ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে আন্তঃব্যাংক দরটি অনুসরণ করছে না।