বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে তৈরি করা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে ড্যাপের অংশীজনদের মতামত নিয়েছি এখন পর্যালোচনা চলছে, আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত করা যাবে।
সোমবার সকালে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম-বিএসআরএফ আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে তার বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকার ড্যাপের গেজেট চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। স্থানীয় পরিষদের অধীনে প্রতিটি রাস্তা-ঘাট নির্মাণ কাজের জন্য আলাদা আইডি নাম্বার দেওয়া হবে। এতে কাজের সুষ্ঠু তদারকিসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে সহজে শনাক্ত করা যাবে। কেউ গাফিলতি করলে সহজে ধরা যাবে। প্রতিটি নির্মাণ কাজের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হবে। সময়ের আগে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে দায়িত্ব নিতে হবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না – এমন অভিযোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এমন অভিযোগের অনেকটাই সঠিক। কিন্তু এর জন্য আমরাও দায়ী। জনপ্রতিনিধিদের সঠিকভাবে কাজ করানোর দায়িত্ব আমার’।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমেছে। তবে তার মধ্যেও বর্তমানে ৮০ শতাংশ পৌরসভার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা আছে। পৌরসভাগুলোতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দেওয়া হবে। বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়েছেন। এতে সেবা উন্নত হবে। জবাবদিহিতা বাড়বে, আয় বাড়বে এবং সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
তাছাড়া, জেলা পরিষদগুলোতে অডিটর নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে প্রতিষ্ঠান স্বনির্ভর হবে, তার দাবি।
তিনি বলেন, জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে আগামীতে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে হলে, এমনকি গ্রামেও, অনুমতির বিধান করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ এবং পৌরসভার আইন পরিবর্তনের কাজ চলছে। জেলা পরিষদের সদস্য কমিয়ে আনার জন্য প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন এবং তিন উপজেলা থেকে একজন মহিলা সদস্য নিয়োগের বিধান রেখে আইন প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, “ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজ করা হচ্ছে।আগামী একমাসের মধ্যে অক্টোবরেই হয়তো ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। দীর্ঘ সময় মানুষজন ছুটিতে বাড়িতে থাকায় বাসা-বাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে এডিস মশার জন্ম হয়েছে। তাই গত দুই বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।”
মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে মশা নিধনের একটি পরিকল্পিত উদ্যোগ নিই। ওই বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২০ সালে কাজ করি, সেজন্য আক্রান্ত হয় মাত্র এক হাজার ৪০৫ জন। কিন্তু, চলতি বছর বেশি আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।’
এলজিআরডি মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তার ওপর দীর্ঘ সময় ধরে চলা বিধিনিষেধ আবার ঈদের ছুটিতে মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যায়। যে কারণে পরিত্যক্ত স্থানে পানি জমে মশার জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে শ্রমিকেরা ছুটিতে থাকায় সেখানেও মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইনে প্রচুর মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের থেকে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক যে, এবার ডেঙ্গুতে অনেক শিশু মারা গেছে। অনেকে স্বজন হারিয়েছেন। আমরা আর একজনকেও হারাতে চাই না। এবার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, এটা পরের সময়গুলোতে কাজে লাগিয়ে পদক্ষেপ নেব।’
বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।