বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্বিসহ ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-জাইকার সহযোগিতা নিয়ে কাজ শুরু করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। তিন বছর মেয়াদি ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি) প্রকল্পের আওতায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে তারা।
এর আওতায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি যানজট থেকে মুক্ত করতে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। তাদের আশা, নতুন এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত দায়িত্বরত কর্মকর্তা, বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন, বিআরটিসি, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক-যাত্রী প্রতিনিধিরা এই প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকবেন।
জাইকা বিভিন্ন দেশে উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়োগ করে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ধারাবাহিকতার পাশাপাশি রাজধানীর চলমান ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে।
ডিএমপির সম্মেলন কক্ষে ৩০ মার্চ ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি) প্রকল্পের প্রথম যৌথ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রকল্পটির দায়িত্ব পালন করছেন ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান।
সভা সূত্রে জানা গেছে, জাইকা প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠিত সভায় বিশ্বের নানা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে। সেই অনুযায়ী বর্তমান অবস্থা নিরসন করে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার জন্য জাইকা এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ, যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। জনগণকে সচেতন করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ডিএমপি।
জাইকা যুক্ত হওয়ায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা বাড়বে বলে মনে করেন আলোচকরা। জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়।
সভায় জাইকা প্রতিনিধি দলের এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা সিটিতে গন্তব্যে যেতে অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কী ধরনের, কীভাবে অন্যান্য দেশ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে, সে সব বিষয়ে জাইকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে এবং বিভিন্ন দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সবার সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি টেকসই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করা সম্ভব হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ আগে থেকেই বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই প্রকল্পের আওতায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করা, ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে সচেতনতা এবং সেগুলো মেনে চলার বিষয় থাকছে এ প্রকল্পে। দুর্ঘটনার ধরণ পর্যালোচনা করে সেই অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, চালকদের মানসিকতা এবং যাত্রীদের মানসিকতা—এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে আরও কীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা যায়, যে সব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এ প্রকল্পে।
সড়কে বাসচালক, যাত্রী, পথচারী সবার মধ্যেই এক ধরনের অসচেতনতা বোধ কাজ করে চলেছে। আইন না মানার প্রবণতাও উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে। এ সব বিষয় চিহ্নিত করে মাঠ পর্যায়ে ট্রাফিক কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছেন এবং নজরদারি রাখছেন। সচেতনতা ও বিভিন্ন কাজকর্ম চালিয়ে আসছেন, যা চলমান রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে জায়কার অভিজ্ঞতাগুলো যুক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও পরিকল্পিত হবে মলে মনে করেন কর্মকর্তারা।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান জানান, ‘ট্রাফিক সিস্টেম একটি চ্যালেঞ্জিং। রাতারাতি এটি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চালক, শ্রমিক, হেলপার আসছে। চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসব বিষয় নিয়ে আরও কীভাবে এগিয়ে চলা যায়, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। জনবান্ধব কীভাবে করা যায় সে বিষয়গুলোকে আমরা মাথায় রেখে কাজ করবো। সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিকের বিষয়ে যাত্রী-চালক-হেলপারদের আরও কীভাবে সচেতনতা করা যায়, কীভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করা যায়—এ সব বিষয় আমরা জাইকার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানবো। আমরা যদি তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা সঠিকভাবে বিনিময় করতে পারি, তাহলে ঢাকা মহানগরের জনসাধারণকে আরও সচেতন করতে এবং বেশি নিরাপত্তা দিতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘জাইকা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগের পাশাপাশি তারা ভেবেছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। পরে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প চালু করা হয়। ঢাকা মহানগরে কর্মক্ষেত্র ও মানুষের চলাচল বেশি। ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক থাকলে অর্থনীতি সচল থাকবে। মানুষের কর্মকাণ্ড আরও গতিশীল হবে। এ সব বিষয় মাথায় রেখে তারা কলাবরেটর অংশ হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’