জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব এর মধ্যেই জনজীবনে পড়তে শুরু হয়েছে। পণ্য পরিবহণে বেড়েছে ভাড়া। সেই সাথে বেড়েছে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও মাছের দাম। এভাবে পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে পেট্রোল-ডিজেল-অকটেনের দাম, ব্যাপক আকারে বাড়ানো সমর্থন করছেন না সাধারণ মানুষ।
শনিবার ভোররাত। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অন্য দিনেই মতোই ব্যস্ততা। সারাদেশ থেকে এখানে বিভিন্ন ধরণের সবজি, মাছ আসছে। আড়ৎদাররা কিনছেন, আবার খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছেন। এখান থেকে অনেক পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আর এসব পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে ডিজেল-পেট্রোল চালিত পিকআপ ও ট্রাকে।
শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবার পর রাজধানীর বাজারের ব্যবসায়ীরা চিন্তায় পড়েছেন। তারা বলছেন ইতিমধ্যে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
পিকআপ ও ট্রাক চালকরা বলছেন ঢাকার ভেতরে একটি ট্রিপের জন্য ২শ থেকে ৩শ টাকা আর ঢাকার বাইরে দূরত্ব ভেদে ১৫শ থেকে তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে তাদের।
এদিকে জ্বালানি তেলের মৃল্য বৃদ্ধিতে পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রকারভেদে মাছ বাজারজাত করণে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে দামও বেড়েছে।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মুগদা, মিরপুর, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, দোলাইর পাড়, মানিকনগর, ধানমণ্ডি, রামপুরা, হাতিরপুল, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে—আলু ও পেঁয়াজের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি আগের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে, হঠাৎ করে ডিমের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে।
কারওয়ানবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা দরে। গতকাল শুক্রবার যা ছিল ১২০ টাকা। এক দিনে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে ডিমের দাম। অপরদিকে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, যা গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজি ১৬০ টাকা দরে।
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. জালাল বলেন, ‘পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। এ কারণে আমাদের বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে, অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়েনি। অবশ্য এখন ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই, শিগগির বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।’
শান্তিনগরের ব্যবসায়ী ইয়াসিন বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর পর এখনও জিনিপত্রের ওপর এর প্রভাব পড়েনি। তবে, শিগগিরই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। হয়তো আগামীকালই কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কারণ, তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ এখনও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকালের মতো ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজও গতকালের মতো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
গাজরের কেজি ১৩০ টাকা, পাকা টমেটো ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২৫ টাকা, পটল ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া করলা, কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাঁচ কলা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙে ও চিচিঙ্গার কেজিও ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো বাজারে।