বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে অব্যাহতি মানবিক করিডোর নিয়ে অন্ধকারে রেখেছে সরকার: বিএনপি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে ভারতের উদ্বেগ পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজের নতুন সম্ভাব্য সময়সূচি প্রকাশ টিসিবির জন্য ১৭৭ কোটি টাকার তেল কিনবে সরকার বাংলাদেশকে নিয়ে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে: আমীর খসরু বাংলাদেশকে পূর্ব কাশ্মীরে পরিণত করতে চায় ভারত: রিজভী হত্যা মামলায় মমতাজ ৪ দিনের রিমান্ডে রমনায় বোমা হামলা মামলা : ২ জনের যাবজ্জীবন, অন্যদের ১০ বছর সাজা সারাদেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস, বাড়তে পারে তাপমাত্রা সরকার প্রধান হিসেবে প্রথমবার নিজ জন্মভূমিতে যাচ্ছেন ড. ইউনূস জামায়াতে ইসলামীর আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি ১৭ মে থেকে শুরু হচ্ছে পিএসএল লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে ট্রাম্পের প্রতি যে আহ্বান জানালো হামাস

তেলের পর আটার দামও আকাশচুম্বি, বাড়ছে প্রতিদিনই

বৃত্তান্ত প্রতিবেদক
আপডেট : মে ১৫, ২০২২

কয়েক দিন ধরে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দামে লাগাম পড়েছে। রাজধানীর পাইকারি বাজার ও দেশের বিভিন্ন মোকামে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম। তবে খুচরা বাজারে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে গম রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবরে বাড়তে শুরু করেছে আটার দাম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে গত দুই দিনের ব্যবধানে আটার দাম কেজিপ্রতি ৭ থেকে ১০ টাকা এবং ময়দায় দাম কমপক্ষে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
একদিকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর, অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। এ দুটি কারণে দামও অনেকটা বেড়েছিল। তবে দুই দিন ধরে দাম আবার কমতে শুরু করেছে।
কুষ্টিয়া, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই দিন আগে মোকামে মানভেদে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১,১০০ থেকে ১,৩০০ টাকায়। শনিবার তা বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১,১০০ টাকা। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম কমেছে ২০০ টাকা বা কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা।
কৃষকেরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে দাম বেশি বেড়েছিল। গত দুই দিন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমছে। তবে মণপ্রতি ১,২০০ থেকে ১,৩০০ টাকার মধ্যে থাকলে কৃষক লোকসান তুলে আনতে পারবেন। এ জন্য আগামী দুই মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুই দিন আগে ওই বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২-৩৩ টাকা। শনিবার তা কমে বিক্রি হয়েছে ২৭-২৮ টাকায়। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। সরবরাহ এভাবে অব্যাহত থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
আটা-ময়দার দাম চড়া: অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকার গত শুক্রবার থেকে গম রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আর এই খবরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন খুচরা বাজারে গত দুই দিনের ব্যবধানে আটা কেজিপ্রতি ১০ টাকা এবং ময়দায় ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

গমের ওপর নির্ভরশীল দেশের বেকারি মালিকরা দাবি করেছেন, গমের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে দেশের আটা ও ময়দা উৎপাদনকারী ও বিক্রেতা কয়েকটি বড় কোম্পানির হাত রয়েছে। তারা দেশের বাজারে আটা ও ময়দা সরবরাহ হঠাৎ করেই কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাদেরও অনেক চড়া দামে আটা ও ময়দা কিনে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে। তেলের পাশাপাশি ময়দার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়াতে হচ্ছে।

রবিবার দেশের খুচরা দোকানগুলো প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে মূলত আটা তৈরির গম আমদানি হতো। আর ময়দা তৈরির গম আসে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা থেকে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলমান থাকায় গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। দেশের আমদানিকারকেরা বিকল্প দেশ হিসেবে ভারত থেকে আমদানি শুরু করেছিলেন। গত শুক্রবার রাতে ভারত সরকার গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হয়েছিল ৩৫-৩৮ টাকা। শনিবার তা বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। দুই দিনের ব্যবধানে খোলা আটায় কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি প্যাকেট আটার দিম ছিল ৪২-৪৫ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৮ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ময়দার দাম ছিল বৃহস্পতিবার ৫৫-৫৮ টাকা। শনিবার তা বিক্রি হয়েছে ৫৬-৬০ টাকা।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি আটা-ময়দা ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, ভারত সরকার গম রপ্তানি বন্ধ করায় ওই বাজারের অনেকেই আটা-ময়দা বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। যদিও দেশে গমের কোনো সংকট নেই। বাড়তি সুবিধা পাওয়ার আশায় ব্যবসায়ীরা বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ভারত সরকার গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের ওপর কতটুকু প্রভাব পড়তে পারে? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক (বিপণন ও অপারেশন) সফিকুল আথহার তাসলিম বলেন, দেশের চাহিদার অনেক গমই মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশ দুটিতে যুদ্ধ চলমান থাকায় অনেকেই বিকল্প আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারতকে বেছে নেন। কিন্তু ভারত সরকারও রপ্তানি বন্ধ করল। তবে এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশের বাজারে প্রভাব বেশি পড়বে। পাশাপাশি বিকল্প সোর্স থেকে আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে।
রাজধানীর মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আটা-ময়দা ব্যবসায়ী হাজি আবদুর রাজ্জাক বলেন, নাভিল গ্রুপ, সিটি ও মেঘনা গ্রুপের কাছে বিপুল পরিমাণ গম মজুত রয়েছে। এই আমদানিকারকেরা এখন সুযোগ নিচ্ছে।
নাভিল গ্রুপের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, যেসব সোর্স থেকে গম আমদানি হচ্ছে, তা ব্যাহত হলে দাম ঊর্ধ্বমুখী হবে। তবে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ পাওয়া গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানান তিনি।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ