জেলায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ অর্জিত হয়েছে। মোট ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে এবারে আমন ধানের ফসল হয়েছে। মৌসুমে শুরুতে খাদ্যের জেলা দিনাজপুরে আগাম জাতের আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়ে গেছে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, দেশের খাদ্য উৎপাদিত জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে এবারে কোন ধরনের বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বাম্পার আমন ধান ফলন অর্জিত হয়েছে। বাংলা কার্তিক মাসের ১৫ তারিখ থেকে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। তিনি গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দিনাজপুর সদর উপজেলার খানপুর, মহব্বতপুর, আউলিয়াপুর এবং পার্শবর্তী চিরিরবন্দর উপজেলার নানিয়াটিকর, বিলাই চন্ডী ও ভবের বাজার এলাকার আগাম জাতের আমন ধান কর্তনের বিষয় সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় কৃষকদের সাথে কথা বলে তিনি আশস্ত হয়েছেন এবারে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা উৎফুল্ল প্রকাশ করেছেন। আগাম জাতের ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের সরবরাহকৃত ধান কাটা ও মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের কাজ করতে কৃষকদের উৎসহ দেয়া হচ্ছে। অত্যাধুনিক মেশিনে জমির ক্ষেতেই ধান কাটা ও মাড়াই ওই মেশিন দ্বারা একই সাথে সম্পন্ন হওয়ায় ধানের মান ভালো হচ্ছে। ওই ধান বাজারে চাহিদা বেশি রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের শস্য ভান্ডার বলা হয় এই জেলাকে। দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে এই জেলায়। চলতি বছর আমন ধানের ভাল ফলন হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠে শোভা পাচ্ছে পাকা সোনালি ধান। জেলার অনেক জায়গায় ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।
জেলার ১৩ উপজেলায় শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা ও মাড়াই। এ বছর ২ লাখ ৭১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ অর্জিত হয়ে মোট ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে। যে সব জমির ধান কাটার জন্য উপযুক্ত হয়েছে, সে সব জমিতে নেমে পড়েছেন শ্রমিক ধান কাটার জন্য। শ্রমিকরা ধান কেটে তা মাঠে ৫ থেকে ৭ দিন শুকানোর জন্য ফেলে রাখছে। পরে সেগুলো আঁটি বেঁধে গৃহস্থের গোলায় তুলে তা মাড়াই করে দিচ্ছেন। কাটা থেকে মাড়াই পর্যন্ত শ্রমিকরা ৫০ শতক প্রতি নিচ্ছেন ৩ হাজার ৩শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। গত ইরি বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভাল ও দাম মনোঃপুত হওয়ায়, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা বেশি করে আমন ধান চাষ করেছে। নতুন আমন ধান ১ হাজার ৮০ টাকা মণ দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ইরি ধানের মতো আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে, তাই কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, চলতি আমন মৌসুমে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ অর্জিত হয়ে মোট ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে এবারে আমন ধানের ফসল হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না থাকায় আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ১০ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই হয়ে গেছে।
তিনি জানান, এবারে আমন মৌসুমে উন্নতমানের আমন ধান বীজ, যথা সময়ে ধান ক্ষেত্রে সার প্রয়োগ, সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫০ শতক জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান হয়েছে। দিনাজপুর আউলিয়াপুর গ্রামের কৃষক আমজাত হোসেন বলেন, এ বছর ধান আবাদ করে আমরা লাভবান হয়েছি। এক দিকে ধানের ফলন ভাল হয়েছে, অপরদিকে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি। এবার উৎপাদিত ধান জেলার চাহিদা র্পূরণ করে জেলা বাহিরে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের সুত্রটি জানায়, বিগত সময় জেলায় উৎপাদিত ধানের অর্ধেক এই জেলার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করত। এবারে গত ইরি-বোরো এবং চলতি আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন উৎপাদিত হওয়ায় অর্ধেকের বেশি উৎপাদিত চাল দেশের অন্য জেলায় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।