দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালো খেলাপি ঋণের পরিমাণ। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে এই ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকায়। যার ৭০ শতাংশের বেশি ঋণের পেছনে সদিচ্ছা না থাকাকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। তাই খেলাপি ঋণ কিনে না নিয়ে আদায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কাজ করার পরামর্শ দেন তারা।
দেশের ১০টি তফসিলি ব্যাংকের মূলধনের ঘাটতি গত ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৯,৬৫৫ কোটি টাকা। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ এবং মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষিত থাকে। এই অংশে ঘাটতি থাকলে ব্যাংক তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো এসব ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করার আগে মূলধন পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১৪টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যে পরিমাণটি বেশি, তা সংরক্ষিত মূলধন হিসেবে রাখতে হবে। কোনো ব্যাংক নির্ধারিত এই পরিমাণ সংরক্ষণ করতে না পারলে, তা ওই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচিত করা হয়।
ব্যাংকের ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের অন্যতম একটি হচ্ছে অনাদায় এবং খেলাপি ঋণ। যা প্রতি তিন মাস পর পর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ইচ্ছেকৃত খেলাপি এবং সদিচ্ছা না থাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বর থেকে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বেড়েছে। সে সময় এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
মন্দা ঋণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক এবং সরকারের সঠিক উদ্যোগ না থাকাকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা।
ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘ এই দেশে যখনই কোনো আইন প্রণয়ন কিংবা প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়, তখন সেরা সেরা গ্রুপগুলো এতে বাধা প্রদান করে। তারা সেখানে সফলও হয়। যদি খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারলে ভালো হতো।’
এদিকে ২০২৫ সালের মধ্যে এই ঋণকে বিতরণকৃত মোট ঋণের ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। যা পূরণে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করে কিনে নেয়ার পর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সেক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ আদায় না করে কিনে নেয়াটা কতটা যৌক্তিক ও অর্থনীতি এবং ব্যাংক খাতের জন্য কতটা সুখকর হবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফারুক মঈনউদ্দীন।।
তিনি আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কিনে নেয়ার বিষয়টি নেই। আমাদের দেশের খেলাপি ঋণ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দিয়ে কিনিয়ে নেওয়া এই মুহূর্তে অসম্ভব বলে মনে হয়।’
বর্তমানে যা খেলাপি ঋণ রয়েছে তার ৩০ শতাংশের কম ব্যবসায় লোকসান হওয়া ও অনিচ্ছাকৃত। আর বাকি ঋণ ইচ্ছেকৃত খেলাপি। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এসব মন্দা ঋণ আদায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদরা।