জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনই প্রমাণ করে, কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেও, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকার ও সরকারি দলকে খুশী করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে।
তিনি বলেন, গেলো ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির জন্য আমরা নির্বাচন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনটি বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আবারো দাবি করছি, নতুন তফসিল ঘোঘণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোনো জালিয়াতির নির্বাচন আমরা মেনে নেবো না। আমরা মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, শুরু থেকেই আমরা ইভিএম-এ নির্বাচনের বিরোধীতা করছি। কারণ ইভিএম-এ ঘোষিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। কোনো প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হলে কোনো প্রমাণ নিয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আবার যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, সেই মাঠ প্রশাসন সরকারের অনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন এর দোষ না থাকলেও, যারা যারা ইভিএম পরিচালনা করেন তারা তো নিরপেক্ষ নয়। তাই কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী সহ্য করতে পারে না, প্রতিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় জিততে চায় সরকার। নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করলে হামলা ও হয়রানীমূলক মামলার শিকার হতে হয়।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, নেত্রকোনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টি নেতা আসমা আশরাফ। তার মনোনয়ন পত্র দাখিলে বারবার বাঁধা দেয়া হয়েছে। পরে তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসী বাহিনী। আসমা আশরাফকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। আবার পিরোজপুরের তুষখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় পার্টি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে সহায়তা দিয়েছেন সফিকুল ইসলাম। সরকার সমর্থকরা বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় জয়ী হতে চেয়েছিলো। কিন্তু নির্বাচনে জিতে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এমন একটি মিথ্যে মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথিমধ্যে সরকার সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে একটি পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেঁচে থাকলেও আজীবনের জন্য তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে।
এসময় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ভয়াবহ লোডশেডিং-এ নাকাল দেশ। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারে না দেশ। তাই চাহিদা মত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারছে না সরকার।
কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে রপ্তানি শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও হুমকির মুখে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে, সরকার ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। মানুষের আয় বাড়েনি কিন্তু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। শিশুখাদ্য কিনতে পারছে না অভিভাবকরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম পুষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হবে। মানুষ বাজার করতে পারছে না, বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে কোটি কোটি পরিবার। টাকার অভাবে মানুষ চিকিৎসা করতে পারছে না, ওষুধ কিনতে পারছে না।
জিএম কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা সরকারি দল করেন শুধু তারাই যেন বেহেস্তে আছেন। দেশের মানুষ যেনো দোযখের আগুনে জ্বলছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ টাকার অভাবে বাজার করতে পারছে না, আর একটি অংশ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
উত্তরখান থানা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আলাল এর সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদের এমপি।