অবশেষে ধসে পড়ল বন্দরনগরী মারিওপোলে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের শেষ দুর্গ। প্রায় ৩ মাস রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে অবশেষে পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিওপোল।
বুধবার বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। সোমবার শহরটির ইস্পাত কারখানা আজভস্টল প্ল্যান্টে অবস্থান নেয়া ২৫৬ জন সেনা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছেন। যার মধ্যে ৫৩ জন গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছে। এই ঘটনাকে বড় জয় বলে মনে করছে মস্কো।
ইউক্রেন সেনাদের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায় কিছু আত্মসমর্পণকারী সেনা বাসে বসে আছেন। স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা আহত সেনাদেরও দেখা গেছে সেই ভিডিওতে। হুইল চেয়ারে বসা এক সেনার মাথায় মাথায় ব্যান্ডেজ।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্বচুক্তি অনুযায়ী আত্মসমর্পণকারী সেনাদের যুদ্ধবন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হবে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। চিকিৎসার জন্য আহতদের নেয়া হবে নোভোয়াজোভস্কে। বাকিদের রাখা হবে ওলেনিভকা গ্রামে। যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ইউক্রেনের।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে চলমান যুদ্ধের শুরু থেকেই কার্যত অনেকটাই বিপর্যস্ত ইউক্রেন। রুশ সেনাদের জোরদার আক্রমণে ইউক্রেনের বহু শহর-গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মারিওপোলসহ দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস এলাকা এখন মস্কোর দখলে।
রুশ সেনাদের জোরদার আক্রমণে প্রায় ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাওয়া মারিওপোলের আজভস্টল স্টিল কারখানা চত্বরে একমাত্র টিমটিম করে জ্বলছিল ইউক্রেনের প্রতিরোধের শেষ বাতি। শুধু সেনা নয়, এই কারখানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু সাধারণ নাগরিক। কিন্তু চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা রুশবাহিনীর হামলা ঠেকানো অসম্ভব বুঝতে পেরে সম্প্রতি সেনাদের প্রাণ বাঁচানোকেই গুরুত্ব দেয় কিয়েভ।
আলোচনা শুরু হয় মস্কোর সাথে। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে নিরাপদ করিডোর দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধার করা হয়। তবে কারখানায় রয়ে যান প্রায় ছয় শতাধিক সেনাসদস্য। তাদেরই ২৫৬ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকিদেরও একইভাবে উদ্ধারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের বৈঠকে এক সদস্য বলেছেন, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত। আমাদের বন্দিদের ওপরে ওরা যা অত্যাচার করেছে, মানবতার উপরে যে নিষ্ঠুরতা হেনেছে, তার পরে ওদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’