সম্প্রতি নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকারদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ চলাকালীন ইটের আঘাতে চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে লুটিয়ে পড়েন কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ। পড়ে যাওয়া নাহিদকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়াম। নাহিদকে সিয়াম আঘাত করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান ইমন।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। সেহরির সময় সংঘর্ষ কিছুটা স্থিমিত হলেও সকালে আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং বেশ কিছু ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তিনি বলেন, প্রায় ১৮ ঘণ্টা চলমান এই সংঘর্ষে ২ জন নিহত এবং গণমাধ্যমকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সংঘর্ষে লিপ্ত উভয়পক্ষের প্রায় দুই শতাধিক আহত হন। এছাড়াও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর এবং কয়েকটি মটোরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুইটি হত্যা মামলা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়াসহ গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোট পাচঁটি মামলা দায়ের করা হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, মূলতঃ গত ১৮ এপ্রিল নিউমার্কেটে পাশাপাশি দুইটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারিদের মধ্যে ইফতারি বিক্রয়ের টেবিল বসানো নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে দোকানের কর্মচারি সজীব ও বাপ্পি ফোন করে কিছু দুষ্কৃতিকারীদের আসতে বলে। দুষ্কৃতিকারীরা উক্ত স্থানে পৌঁছালে পুনরায় ওই দুই দোকানের কর্মচারিদের মধ্যে মারামারি হয়।
পরে ওই মারামারিকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। এতে নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্র ও কর্মচারিদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনাটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিবিধ তথ্য ও কন্টেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেওয়ার ফলে উত্তেজনা চরম সহিংসতার রুপ নেয়। সংঘর্ষে নাহিদ (১৮) নামের একজন কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী ও মোরসালিন (২৬) গুরুতর আহত হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বিষয়টি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে, র্যাব জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ এর যৌথ অভিযানে শরীয়তপুর ও কক্সবাজার হতে সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব(২৩), মেহেদী হাসান বাপ্পি(২১) ও কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী (৩) মাহমুদুল হাসান সিয়াম (২১) কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সহিংসতা এবং হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত বাপ্পি ও সজীব নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডে কর্মচারী হিসেবে চাকুরীরত ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, রাজধানীর নিউমার্কেটের ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড এবং ওয়েলকাম ফাস্টফুড এর কর্মচারীদের মধ্যে গত ১৮ ইফতার বিক্রির টেবিল বসানো নিয়ে বাকবিতন্ডার সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে তারা পরিচিত কিছু দুষ্কৃতিকারীকে মোবাইল ফোন দিয়ে ডেকে আনে। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে ১০/১৫ জন দুষ্কৃতিকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড দোকান কর্মচারীদের মারধর করে। এ সময় অন্যান্য দোকানের কর্মচারীরা আক্রমন প্রতিহতের চেষ্টা চালায়। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক আকারে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর বাপ্পী ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপন করে এবং নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য তার লম্বা চুল কেটে ছোট করে এবং কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে চাকুরীর চেষ্টা চালায়।
র্যাব কর্মকতা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রেফতারকৃত মো. মাহমুদুল হাসান সিয়াম সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় নাহিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদ মৃত্যুবরণ করে। ঘটনার পর গ্রেফতারকৃত সিয়াম গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়।