রমজান আসন্ন হলেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছেই। যা অস্বস্তি বাড়াচ্ছে ক্রেতার। এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় তারা হতাশ। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার ও ডলারের বাড়তি দামের কারণেই বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।
প্রতিবছর রমজান মাস সামনে রেখে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অসাধু সিন্ডিকেট। মাস খানেক আগে থেকেই বাড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। শবে বরাতের আগ থেকেই দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
আজ (শুক্রবার) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলার দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। প্রতি কেজি ডাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। চিনির সংকট এখনও কাটেনি। ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের বেঁধে দেয়া দর মানছেন না ব্যবসায়ীরা।
গেল বছর রমজানের আগে বিদেশি আদার কেজি ছিল ১২০ টাক, এবার সেই আদার দাম ঠেকেছে ২৫০ টাকায়। বেড়েছে রসুন, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনির মতো মসলার দামও। মুরগীর দামও ওঠানামা করছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগীর দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগীর কেজি এখন ২৫০। এতে আমিষের চাহিদা মেটানো নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতারা।
বিক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। বাজারে নজরদারি বাড়ানো না হলে রোজার সময় পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় আশংকা করছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর মিরপুর, শনিরআখড়া, কারওয়ানবাজার, সদরঘাট, রায়সাহেববাজার, মুগদা, যাত্রাবাড়ী, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। খাসির মাংসের দাম প্রতিকেজি ১১শ টাকা। আর বকরির মাংস ৯০০ টাকা।
এদিকে সামনের রোজায় গরুর মাংসের দাম কততে গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে শঙ্কিত অনেক ক্রেতা। কারওয়ানবাজারে লিটু নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘যাদের নির্দিষ্ট আয় তারা কোনো দিনই বাড়তি টাকা দিয়ে মাংস কিনে খেতে পারবে না। কারণ একদিন বেশি কিনলে সংসারের অন্য খরচ বাড়বে। তারমধ্যে বাসায় বৃদ্ধ বাবা মা রয়েছে, তাদের জন্য ঔষুধ কিনতে হয় প্রতিমাসে। এখন সেই ঔষুধের দামও বাড়তি।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে এমন একটা পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি।’
লিটু আরও বলেন, ‘এ মাসেই রোজা শুরু হচ্ছে। রোজার সময় একটু ভালোমন্দ খেতে সবারই ইচ্ছা করে। এই রোজা উপলক্ষে গুরুর মাংসের দাম কেমন বৃদ্ধি পায়, তাই নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
এদিকে টানা তিন সপ্তাহ ধরে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন ২৪০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর হালিপ্রতি ডিমের দাম ৪৮-৫০ টাকা।মাছের বাজারেও গিয়ে দেখা গেছে, চাষের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ, চিংড়ি ও দেশি মাছের দাম বেড়েছে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত।
গুলসা মাছ কেজি ৬০০ টাকা, মলা মাছ কেজি ৩০০, কাতল মাছ কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, শিং মাছ কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙাস ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, কৈ মাছ ২৬০ টাকা। অন্যদিকে দেশি টেংরা, শিং, বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০-৮০০ টাকা।
মুদি বাজারে দেখা গেছে, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে এ সপ্তাহ থেকে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে ৯০-৯৫ টাকা ছিল। একইভাবে প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ৯৫-১০০ এবং মাশকলাইয়ের ডাল ১৫৫-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজার, বেগুন ৮০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, পটল ১২০ টাকা ও ঝিঙা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।