বৃত্তান্ত প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সঙ্গে রবিবার আলোচনায় অংশ নেয় বিকল্পধারা বাংলাদেশ এবং গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশ।
রবিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান এমপি বিকল্পধারার সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের এবং গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোকাব্বির খানের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে পৃথকভাবে এ আলোচনায় অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভবনে তাদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়াই এই আলোচনার লক্ষ্য। রাজনীতিবিদদের অনুকরণীয় এমন কিছু করা দরকার, যা থেকে নতুন প্রজন্ম শিক্ষা নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।
আলোচনাকালে গণফোরামের প্রতিনিধিদল নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়।
তারা আশা করেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির চলমান এ সংলাপ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
পরে সন্ধ্যায় বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেয় বলে সংগঠনটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ তিন দফা সুপারিশ পেশ করেন। তারা বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।
বিকল্প ধারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো দ্বারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম ও কমিশনারদের নাম প্রস্তাব এর সুপারিশ করেন, যেখান থেকে সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে।
দলটির পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে ৩ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। দলটি সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য দেশের তিনজন বরেণ্য ব্যক্তির নামও প্রস্তাব করেছে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, “সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধানাবলীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠনে বিধানাবলী তথা আইন প্রণয়ন করা হয়নি। এর ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায়। যা গণতন্ত্রের জন্য অনেক সময় শুভ হয় না ।”
রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে আরও বলা হয়, “আপনি সংবিধানে বর্ণিত নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়ে সরকারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জাতি চায় রাষ্ট্রপতির পদটি সবসময় বিতর্কের ঊর্দ্ধে থাকুক।”
প্রস্তবনায় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে আরও বলা হয়, “যেহেতু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শিগগিরই শেষ হচ্ছে সেহেতু নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই স্বল্পসময়ে নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়ত সম্ভব নয়। কাজেই আপনি সার্চ কমিটি গঠনের মাধমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে যে বিকল্প পন্থা গ্রহণ করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ তাকে স্বাগত জানাচ্ছে।”
রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া প্রস্তাবনায় বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর সুপারিশসমূহ হচ্ছে: (১) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশনের জন্য একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও একজন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করবেন। (২)প্রস্তাবিত নাম থেকে সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য নাম (প্রয়োজনীয় সংখ্যক) মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবেন।
সার্চ কমিটি গঠনের জন্য বিকল্পধারা বাংলাদেশ দেশের তিনজন বিশিষ্ট নাগরিক বা ঊর্ধ্বতন পদাধিকারীর নাম সুপারিশ করছে। এঁরা হলেন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের ছিলেন: বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও যুগ্ম মহাসচিব এনায়েত কবির।