ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে কাগজে কলমে ভোটার থাকলেও নেই ইউনিয়নের অস্তিত্ব। তবুও সেই ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলেও কাগজে কলমে চলছে ইউনিয়নের কার্যক্রম। ইউনিয়নটিতে কোনো স্থলভাগ না থাকায় আগামী ১৫ জুন পৌরসভার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে একত্রে ৯ ওয়ার্ডের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রচারণা।
সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝে জনমানবহীন রয়েছে ইউনিয়ন, নেই তেমন কোনো ঘরবাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠান। গত বছর মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ নানা স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ভোলার দৌলতখান উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাচীনতম ইউনিয়ন হাজিপুর। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙনে ইউনিয়নটি বিলীন হয়ে যায়। এখন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে অবস্থান করছে ইউনিয়নটি। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ইউনিয়নটির মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪০ জন। তবে ইউনিয়নটির কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও চরে রয়েছে দু-তিনটি গরু-মহিষের ঘর ও মাছের আড়ৎ। ভাঙনে বসতভিটা হারানো মানুষগুলো জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছেন, সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন সেখান থেকেই। কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকলেও সেখানে বসতি নেই কারো।
তার পরেও আসছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে হাজীপুর ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর, চর খলিফা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নেও পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। প্রার্থীরা এসব ইউনিয়নে পোস্টারিং করেছেন। প্রার্থীরা ছুটছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
জানা যায়, জাতির সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের জন্ম এই হাজীপুর ইউনিয়নে। দুঃখজনক হলেও সত্য অযত্ন-অবহেলায় জাতির সূর্য সন্তানের জন্মভূমিটুকু রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা আলম সিকদার, সফিজল ও হারুন মালসহ একাধিক ভোটার বলেন, নদী ভাঙনের কারণে ইউনিয়নটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দারা এখন বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করে অন্য ইউনিয়নের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। আর এই ইউনিয়নের সরকারি বরাদ্দ তারা কিছুই পাচ্ছেন না। নির্বাচন আসলে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রত্যাশা করেন প্রার্থীরা, ভোট শেষ হলে তাদের আর খোঁজ খবর থাকে না। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ না থাকায় পরিষদ থেকে দাপ্তরিক কাগজ পত্রের জন্য তাদের বাড়িতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।
আর ওই ইউনিয়ন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. হামিদুর রহমান টিপু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবী আবদুল্লাহ কিরণ পাঠওয়ারী জানান, নির্বাচন শেষে হাজীপুর ইউনিয়নে বসবাসের উপযোগী আশ্রয় প্রকল্প নির্মাণের পাশাপাশি নানা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
এদিকে দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আবদুস সালাম জানান, হাজীপুর ইউনিয়নটি নদীর মাঝখানে হওয়ায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। পাশাপাশি বর্ষার সময় নদী উত্তাল থাকায় দৌলতখান পৌরসভায় ভোট গ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।
ইউনিয়নটি নদীগর্ভে বিলীন তার পরেও নির্বাচন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব ঠিক করেছেন। আমাদের কাজ হলো নির্বাচন পরিচালনা করা। আমরা তাই করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করার প্রয়োজন আমরা তাই করবো।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারেক হাওলাদার জানান, নদী ভাঙনের কারণে ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়েছে কিনা বিষয়টি দেখবে নির্বাচন কমিশন। পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য ছাড়া কোনো ইউনিয়নকে বিলুপ্ত বলা যায় না।
তিনি আরও জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারি বিবেচনায় নিয়ে জনসংখ্যা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন বিলুপ্ত বা নেই এর কোনো অফিসিয়াল অর্ডার নেই। বিবিএস পরিসংখ্যান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা। তারা ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমরা বিলুপ্ত বলতে পারি না। বিলুপ্ত হয়েছে এমন কোনো পত্র নেই। ভোটের বিষয় নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। জেলা, সদর ও দৌলতখান উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সরেজমিন দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা পুরোপুরি তাদের বিষয়। আমরা প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবো অন্য কিছু নয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ শফিকুল হক জানান, চরাঞ্চলে যেহেতু বর্ষার সময় কোনো মানুষ থাকে না। সবাই উপজেলার উপস্থলে বিভিন্ন এলাকায় থাকে। এছাড়া চরে ২/১টি মহিষের টিলা, মাছের আড়ৎ আছে তাই সেখানে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা নির্বাচনের দায়িত্ব প্রাপ্তরা স্পটে গিয়ে থাকতে পারবে না তাই আমরা এসব দেখে কমিশনের কাছে মেইনল্যান্ডে নির্বাচন করার অনুমতি চেয়েছি এবং কমিশন অনুমতি দিয়েছে। তাই পৌরসভার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ করা হবে।
দুটি মহিষের ঘর আর মাছের আড়ত নিয়ে একটি ইউনিয়ন কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে, তার প্রতিনিধি হিসেবে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করবো। তারা বন্ধ করে দিলে করবো না বলে মন্তব্য করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
উল্লেখ, অষ্টম ধাপে হাজীপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দুইজন মেম্বার পদে ২৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।