বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার দেশের নাম ও সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার সরকারের নেই: জাসদ শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন রোনালদোকে ধরে রাখতে ‘অবিশ্বাস্য’ প্রস্তাব আল নাসরের গাজায় অস্ত্রবিরতির কৃতিত্বের দাবি বাইডেনের ক্রিকেট বোর্ডে স্বৈরাচারী প্রভাব, সমাধানের আহ্বান আমিনুল হকের ‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া গণতান্ত্রিক দেশ গড়া সম্ভব নয়’ দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত নারীর মৃত্যু কোনো ভোটই রাতে হবে না: ইসি মাছউদ বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বদলীয় সভায় যোগ দিচ্ছেন সালাউদ্দিন আহমেদ ‘ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব শিক্ষার্থী বই পাবে’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিন্দা ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐক্যই মূল চ্যালেঞ্জ

পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের আদ্যোপান্ত

রিপোর্টারের নাম :
আপডেট : জুন ২৫, ২০২২
পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের আদ্যোপান্ত
padma-Span-01

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পর্যন্ত ৬.১৫ কিলোমিটারের স্বপ্নের বহুমুখী পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার প্রক্রিয়াটা এত সহজ ছিল না। এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপরে বসেছে ৪১টি ইস্পাতের স্প্যান। একটি পিলার থেকে আরেক পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। ইস্পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হয়েছে বলে জান যায়।

২০১৪ সালের ১৮ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। আর নদীশাসনের জন্য চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে।

এরপর স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে অংশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে স্প্যানের অবয়ব তৈরি করা। তারপর সেগুলোকে নির্ধারিত পিলারের উপর বসানোর জন্য পৃথিবীর সবচয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ানই স্প্যানটি বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় মাঝ নদীতে।

২০১৭ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রথম অবয়ব পেতে শুরু করে। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান।

ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি ৩২ এবং ৩৩ নাম্বার পিলারের ওপর বসানো হলো ২১ তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি ৫ এবং ৬ নাম্বার পিলারের ওপর বসেছে ২২ তম স্প্যান, ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে বসেছে ২৩ তম স্প্যান, ১১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৪ তম স্প্যান, ২১ ফেব্রুয়ারি বসেছে ২৫ তম স্প্যান, ১০ মার্চ বসেছে ২৬ তম স্প্যান, ২৮ মার্চ বসেছে ২৭ তম স্প্যান।

১১ এপ্রিল বসেছে ২৮ তম স্প্যান, ৪ মে বসেছে ২৯ তম স্প্যান, ৩০ মে বসেছে ৩০ তম স্প্যান, ১০ জুন বসেছে ৩১ তম স্প্যান, ১১ অক্টোবর ৩২ তম, ১৯ অক্টোবর ৩৩ তম, ২৫ অক্টোবর ৩৪ স্প্যান, ৩১ অক্টোবর বসছে ৩৫ স্প্যান, ৬ নভেম্বর ৩৬ তম, ১২ নভেম্বর ৩৭ তম, ২১ নভেম্বর ৩৮ তম স্প্যান, ২৭ নভেম্বর ৩৯ তম, ৪ ডিসেম্বর ৪০ তম স্প্যান এবং সবশেষ ৪১ তম স্প্যান বসানো হলো ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর।

২০১৭ থেকে ২০২০ তিন বছরের চেষ্টায় ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মাওয়া থেকে জাজিরা অংশে সংযোগের মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো ৬.৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু।

ডাঙ্গার অংশসহ প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা বলছেন, পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির গভীরে পাইল বসানো ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। পৃথিবীর আর কোনো নদীর ওপর সেতু বানাতে গিয়ে এতো গভীরে পাইল বসাতে হয়নি। প্রকৌশলীরা আরও জানিয়েছেন, এরকম বিশাল ও প্রমত্ত একটি নদীর ওপর এতো বড়ো সেতু নির্মানের কাজ প্রকৌশলগত দিক থেকে ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। এজন্য পৃথিবীর বড় বড় তিনটি ড্রেজার আনা হয়েছিল।

পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ড. আইনুন নিশাত জানান, শীতের সময় পদ্মা নদীতে গভীরতা থাকে ১০০ ফুটের কাছাকাছি। বর্ষার সময় এই গভীরতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। একারণে চ্যালেঞ্জ ছিল নদীর ওই গভীরতায় সেতুর যেসব পাইল বসানো হবে সেগুলোর ফাউন্ডেশন তৈরি করা।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের নদীতে পাথর নেই। ফলে সেতুর পুরো ভার রাখতে হয় মাটিতে। একারণে নদীতে অনেক ভারী পাথর, কংক্রিটের ব্যাগ এবং জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার এক একটির ওজন ৮০০ কেজি থেকে এক টন। নদীর তলদেশে যতটুকু যাওয়া সম্ভব অর্থাৎ ড্রেজিংয়ের ক্ষমতা যতোটুকু ছিল ততোটা গভীরে।
আইনুন নিশাত বলেন, সেতুর ভার বহন করার জন্য এর যতোটা গভীরে পাইল বসানোর দরকার ছিল সেটা ছিল অসম্ভব এক চ্যালেঞ্জ। এতো গভীরে যেতে হয়েছে কারণ উপরের ৬০ থেকে ৭০ মিটার শুধু পানি, যেখানে পাইলের কোন শক্তি নেই। অনেক গবেষণা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত ওই গভীরতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তখন সেতুর নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।

এক নজরে পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য- ৬.১৫ কিলোমিটার
পদ্মা সেতু প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম- চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি
পদ্মা সেতুর প্রস্থ- চার লেন সড়কের সেতুটির প্রস্থ ৭২ ফুট
পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হবে- নিচ তলায়
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন দুই প্রান্তে- ১২ কিলোমিটার
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য- দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার
পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা- ৩৮৩ ফুট।
পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা- ৬০ ফুট।
প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং- ৬টি।
পদ্মা সেতুর মোট পাইলিং সংখ্যা- ২৬৪টি।

পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা- ৪২টি।
পদ্মা সেতুর স্প্যান সংখ্যা- ৪১টি
পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়- ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়- ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর।
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয় – ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর
পদ্মা সেতুর নির্মাণে সময় লাগে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন
পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয়- মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতুতে রেল ছাড়াও আরও রয়েছে- গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা।


এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ