ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সড়ক-মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা না নিতে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয় পুলিশ প্রশাসন। তাতে খামারি ও গৃহস্থরা আশায় বুক বাঁধলেও তাদের সে প্রত্যাশা ভেঙে পড়তে সময় লাগেনি মোটেও। হাটে আগত ট্রাকচালক ও বেপারীরা বলছেন, আগের মতো প্রতিটি রুটে গবাদিপশুবাহী ট্রাক থামিয়ে চাঁদা নেয়া না হলেও অনেক স্পটে থেমে নেই চাঁদাবাজি। যার প্রভাব পড়েছে পশুর দামের ওপর, গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
উত্তরের জনপদ পাড়ি দিয়ে নগরের হাটে ১৮টি কোরবানির গরু নিয়ে এসেছেন রহিম তালুকদার। ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পথে প্রতি গরুতে ভাড়া গুনতে হয়েছে ২ হাজার টাকার ওপরে। সাথে যোগ হয়েছে সড়কে নানা স্তরে চাঁদার টাকা।
রহিম তালুকদার কতটা সত্য তথ্য দিলেন এখন তা জানার পালা। পরিবহন চালকরা বললেন, অন্তত ১০ থেকে ১২টি স্পটে দিতে হয়েছে চাঁদা।
ট্রাক চালকদের একজন বলেন, ‘টাকা ছাড়া কি আর হাটে আসা যায়। ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা করে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁদা নিয়েছে।’
দেশের নানা জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা বললেন, পথে পশুবাহী ট্রাক চলতে অনেকেই বাঁধা সৃষ্টি করেছে যেন তাদের পছন্দসই হাটে গরু নামানো হয়।
রাতে ঢাকার অন্তত ৩টি হাট ঘুরে জানা গেল বিভিন্ন রুট বা পয়েন্টে চাঁদাবাজ চক্র ৪০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। তাদের দাবি করা চাঁদা দেয়া না হলে পরতে হচ্ছে হয়রানিতে।
ব্যাপারীদের একজন বলেন, ‘টাকা দিতে আমরা বাধ্য। সকালে আসছি রৌদের মধ্যে গরু হাফাচ্ছে। আরও ৫ হাজার লাগলে দিয়ে এখানে আসতাম।’
বেপারীদের অভিযোগ সড়ক-মহাসড়কে প্রভাবশালী ব্যক্তি, পরিবহন শ্রমিক নেতা কিংবা স্থানীয় সংঘবদ্ধ চক্র পশুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছে। তাদের ভাষ্য, যে কোনো এলাকা থেকে গরু অন্য কোনো বিভাগীয় শহরে আনা-নেয়ার পথে গরু প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
চাঁদার এ টাকা গরুর দামের সঙ্গে যোগ করায় উচ্চমূল্যের বোঝা ক্রেতাদের ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন তারা।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘গরুর দাম অনেক চাচ্ছে। দেখলাম বাজেটের মধ্যে হলে নিয়ে যাবো।’
বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘আমরা যে দামে চাচ্ছি তার থেকে কম দামে বলছে। কাষ্টমার অনেক আছে দেখি কি হয়। তবুও দুইটা বিক্রি হয়েছে লাভ হয়নি তেমন।’
ঢাকায় ২টি স্থায়ী হাটসহ মোট ২২টি হাট রয়েছে। প্রতিবছর দেশে ১ কোটি ৭ লাখ পশু জবাই করা হয়। উদ্বৃত্ত থাকে ২০ থেকে ২৫ লাখ পশু। হাটগুলোতে এবারও হাসিল বা কর আদায় করা হচ্ছে ৫ শতাংশ হারে।